এ কেমন যুদ্ধবিরতি?: গাজায় ৪৬ শিশুর মৃত্যুতে আর্তনাদ


গাজায় রাতভর ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৪৬ শিশুসহ অন্তত ১০৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বরাতে বুধবার (২৯ অক্টোবর) ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রাতভর ব্যাপক হামলার পর গাজায় যুদ্ধবিরতি ‘ফের কার্যকর’ হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর থেকে কথিত যুদ্ধবিরতি শুরুর পর এটিকেই ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা এই নাজুক যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করায় তিনি ‘শক্তিশালী পাল্টা আঘাত’ চালানোর নির্দেশ দেন। ইসরায়েলের দাবি, হামাস যুদ্ধে নিহত এক বন্দির আংশিক দেহাবশেষ ফিরিয়ে দিয়ে চুক্তি ভঙ্গ করেছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এই ঘটনা নিয়ে হামাসের বিরুদ্ধে ‘অভিনয়’ করার অভিযোগ তুলে এ সংক্রান্ত ১৪ মিনিটের একটি ড্রোন ভিডিও প্রকাশ করেছেন। এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে হামাস জানিয়েছে, তারা আরেক বন্দির দেহ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করবে।

এদিকে এশিয়া সফরে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। তিনি আরও বলেন, হামাসকে ঠিকভাবে আচরণ করতে হবে—নইলে তারা নিশ্চিহ্ন হবে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলার আগে ইসরায়েল ওয়াশিংটনকে অবহিত করেছিল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজায় হামাসের ৩০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে, তবে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, রাফাহ শহরে গোলাগুলির সময় ৩৭ বছর বয়সী মাস্টার সার্জেন্ট ইয়োনা এফ্রেইম ফেল্ডবাউম নিহত হন। তিনি মার্কিন নাগরিকত্বও ধারণ করতেন। হামলার সময় ইসরায়েলি বাহিনী হামাসের টানেল ও স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করছিল। তবে হামাস দাবি করেছে, রাফাহ শহরের ওই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তারা ইসরায়েলের বিমান হামলাকে ‘যুদ্ধবিরতির প্রকাশ্য লঙ্ঘন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নিহত ১০৪ জনের মধ্যে ৪৬ জন শিশু ও বহু নারী রয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ২৫৩ জন। গাজার শিফা হাসপাতাল জানিয়েছে, রাতভর তারা ২১টি মরদেহ গ্রহণ করেছে এবং ২০ শিশুসহ ৪৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দেইর আল-বালাহ, খান ইউনিস ও মধ্য গাজার হাসপাতালগুলোতেও একইভাবে আহতদের ঢল নেমেছে।

দেইর আল-বালাহর এক নারী বলেন, “তারা আমাদের পাশে বোমা ফেললো—ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে গেলাম আমরা আর আমাদের শিশুরা।” ভোরে স্থানীয়রা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেন। আমনা কিরিনাউই নামে বেঁচে যাওয়া এক নারী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “এ কেমন যুদ্ধবিরতি?”