- (উপরে বামে থেকে) গাজী মুহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল, ইদ্রিস মিয়া, এনামুল হক এনাম, সৈয়দ সাদাত আহমদ, ডা. ফরিদুল ইসলাম। (নিচে বামে থেকে) সাইফুদ্দীন সালাম মিঠু, রেজাউল করিম নেছার, শহীদুল ইসলাম, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ডা. এমদাদ হোসেন।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনটি জোটগতভাবে পেতে চায় হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশ। এ আসনে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে প্রার্থী করা হতে পারে এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ পটিয়ার দুটি হেফাজতপন্থী মাদ্রাসা সফর করায় এই আলোচনা দানা বাঁধে। তবে এ খবরে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিলেও হেফাজতকর্মীরা বেশ উচ্ছ্বসিত।
হেফাজতে ইসলামী অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও আজিজুল হক ইসলামাবাদীর রাজনৈতিক পরিচয়ও রয়েছে; তিনি নেজামে ইসলামী বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। ধারণা করা হচ্ছে, তার মনোনয়নের ক্ষেত্রে নেজামে ইসলামীর চেয়ে পটিয়ায় হেফাজতের প্রভাবকেই কাজে লাগানো হবে। রাজনৈতিক মহলের অনেকে মনে করছেন, আজিজুল হক ইসলামাবাদীর আহ্বানেই সালাউদ্দিন আহমদ পটিয়া সফর করেন এবং এই সফরকে ঘিরেই জোটের প্রার্থীতার বিষয়টি আলোচনায় আসে।
পটিয়ায় বিএনপির দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও একাধিক গ্রুপিংয়ের কারণেই বিএনপির হাইকমান্ড হেফাজতের দিকে ঝুঁকছে বলে অনেকে ধারণা করছেন। ২০০৮ সালের পর থেকেই পটিয়া বিএনপি অন্তত চারটি ধারায় বিভক্ত। এর মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া, সাবেক এমপি গাজী মুহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য এনামুল হক এনাম এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য সৈয়দ সাদাত আহমদের অনুসারীরা রয়েছেন। সম্প্রতি চাকরিচ্যুত ব্যাংকারদের অনুদান দেওয়া নিয়েও দুই পক্ষের বিরোধ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে প্রকাশ্য রূপ নেয়।
অন্যদিকে, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এটিকে ‘জুলাই আন্দোলনের ফসল’ হিসেবে দেখছে। সংগঠনের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্রজনতার আন্দোলনে পটিয়ায় হেফাজতপন্থী মাদ্রাসা ছাত্রদের ‘অনেক বড়’ অবদান ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বিএনপির একসময়ের মিত্র জামায়াতে ইসলামী বিএনপি-বিরোধী অবস্থান নেওয়ায় নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের সৃষ্টি হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, জামায়াতকে মোকাবেলা করতে বিএনপি অরাজনৈতিক ইসলামী সংগঠন হেফাজতকে কাছে টানছে।
পটিয়া আসনটি একসময় বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। বিএনপির মনোনয়ন পেতে বর্তমানে মাঠে কাজ করছেন কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক এমপি গাজী মো. শাহজাহান জুয়েল, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব এনামুল হক এনাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য সৈয়দ সাদাত আহমদ, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা সৈয়দ হাবিব হাসনাত, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুদ্দিন সালাম মিঠু, রেজাউল করিম নেছার, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ এবং মহানগর বিএনপির সাবেক শিল্প বিষয়ক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম চৌধুরী। যদিও সম্প্রতি গুলশানে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারে পুরোনো চারজনকেই ডাকা হয়েছিল, তবে কাউকে মনোনয়ন নিশ্চিত করা হয়নি।
এদিকে, বিএনপির একসময়ের মিত্র জামায়াত সারাদেশে তিনশ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, যার অংশ হিসেবে পটিয়ায় চিকিৎসক ডা. ফরিদুল আলমকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। তিনিও মাঠে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে, জোটগত নির্বাচনে এলডিপি নেতা এয়াকুব আলী এবং গণঅধিকার পরিষদের ডা. এমদাদুল হাছানও পটিয়া আসনটি চাইবেন বলে জানা গেছে।
জোটের শরিকদের আসনটি ছেড়ে দেওয়া হতে পারে, এমন শঙ্কায় পটিয়া বিএনপিতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক নেতাকর্মী প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, তারা বিএনপি থেকেই মনোনয়ন চান এবং ‘বাইরে’ থেকে প্রার্থী দেওয়া হলে তা মানা হবে না। তবে পটিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, “এখনো পর্যন্ত কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। মনোনয়নের বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এক্ষেত্রে কেন্দ্র বিএনপির ত্যাগীদের মূল্যায়ন করবে।”
এই গুঞ্জনে হেফাজত নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। এ ব্যাপারে পটিয়া হেফাজত ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মুফতি বেলাল উদ্দিন আযাদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, “হেফাজতে ইসলামী কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয় এবং রাজনৈতিকভাবে নির্বাচন করবে না। আজিজুল হক ইসলামাবাদী হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে তিনি যদি একজন আলেম হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন, আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন সহযোগিতা করবো।”
জোটগত মনোনয়নের বিষয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী একুশে পত্রিকার কাছে আশা প্রকাশ করেছেন, হেফাজতে ইসলামী থেকে নয়, বরং নেজামে ইসলাম থেকে জোটগতভাবে বিএনপি তাকে পটিয়া আসনে মনোনয়ন দেবে।
পটিয়া আসনে মনোনয়ন বা জোটের বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া একুশে পত্রিকাকে বলেন, “এখনো পর্যন্ত জোট কিংবা দলে কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সম্প্রতি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ডেকে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, কেন্দ্র থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সবাই তার পক্ষে কাজ করবে। তিনি যে সিদ্ধান্ত দিবেন, তা আমরা মেনে নিব।”

