
কক্সবাজারের চকরিয়ার নলবিলা খালটি পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ১৭০০ একর জমিতে চাষাবাদ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মাতামুহুরী নদী থেকে আসা পলিতে খালের গতিপথ রুদ্ধ হওয়ায় উপরের অংশে জলাবদ্ধতা এবং নীচের অংশে সেচের পানির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে।
ভুক্তভোগী কৃষকরা জরুরি ভিত্তিতে খালটি খননের দাবি জানালেও, উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনার পাঁচ মাস পরও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, খালটি ভরাট হয়ে পড়ায় সেচ (পানি) সুবিধার অভাবে তিন ইউনিয়নের অন্তত ১৭০০ একর জমিতে কয়েক বছর ধরে চাষাবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তা লেগে রয়েছে। খালের উপরের অংশ, বিশেষ করে কাকারা ইউনিয়নের সাকের মোহাম্মদচর, বারআউলিয়া নগর ও শাহওমর নগর এলাকার বিপুল পরিমাণ চাষের জমি জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত থাকছে।
অপরদিকে, লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের পাশের বিশাল বিল এবং কৈয়ারবিল ইউনিয়নের একটি বড় অংশে খাল শুকিয়ে যাওয়ায় সেচের অভাবে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে।
কাকারা ইউনিয়নের বাসিন্দা সিনিয়র সাংবাদিক এম জাহেদ চৌধুরী বলেন, নলবিলা খালটি ভরাট হয়ে পড়ার কারণে বছরের বেশিরভাগ সময় সাকের মোহাম্মদচর ও শাহওমর নগর এলাকার বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত থাকে। খালটি খননের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিরসন করা গেলে এই জমিগুলোতে চাষাবাদ করা সম্ভব হবে।
লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুর মোহাম্মদ মানিক বলেন, নলবিলা খালটি লক্ষ্যারচর, কাকারা ও কৈয়ারবিলের সংযোগস্থল। একসময় এই খালের পানি সুবিধা নিয়ে তিন ইউনিয়নের কৃষকেরা শুষ্ক মৌসুমে নিরবচ্ছিন্নভাবে চাষাবাদ করতেন। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে খালটি ভরাট হয়ে পড়ায় কৃষকেরা চাষাবাদ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শাহনাজ ফেরদৌসী বলেন, নলবিলা খাল ও জালিয়ার ছড়া খাল ভরাট হয়ে পড়ার কারণে তিন ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি অনাবাদি পড়ে আছে। এ অবস্থায় দুটি খাল খননের বিষয়ে চলতি বছরের মে মাসে উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
কৃষিবিদ শাহনাজ ফেরদৌসী জানান, এরই পরিপ্রেক্ষিতে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে খাল দুটি খননে বিএডিসি চকরিয়া উপজেলার দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু গেল পাঁচ মাসেও বিএডিসি উল্লেখিত দুটি খাল খননে কোনো মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ করেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) চকরিয়া উপজেলা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক বলেন, খাল দুটি খননে উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভার সিদ্ধান্তের একটি রেজুলেশন পাওয়া গেছে। এবিষয়ে বিএডিসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক আরও বলেন, খাল দুটি খননের জন্য বিএডিসি কর্তৃক অর্থবরাদ্দ নিশ্চিত হওয়ার পর টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হলে খননকাজ শুরু করা সম্ভব হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না পাওয়ায় খননকাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে।
