শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২

নামেই সিএমপির সোয়াত টিম!

| প্রকাশিতঃ ৪ জুলাই ২০১৬ | ৪:০০ পূর্বাহ্ন

soatচট্টগ্রাম: পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াত। পুরো নাম স্পেশাল উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিকস। অত্যাধুনিক অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ রয়েছে এর প্রতিটি সদস্যের। জিম্মি উদ্ধার ও জরুরী প্রয়োজনে সোয়াতকে মোতায়েন করা হয়। ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে অনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে সোয়াত। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) সোয়াত টিমে কর্মরত আছেন মাত্র ৪ জন! এদেরমধ্যে আবার কেউ পুলিশের বিশেষ শাখায় আবার কেউবা বডিগার্ড হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এমনকি সিএমপিতে সোয়াতের জন্য নেই গাড়ি ও আলাদা অফিসও।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, চারজন দিয়ে সোয়াত টিম হয়না। তারপরও এখন যা আছে, তাই নিয়ে আপাতত চলতে হবে। সোয়াতের শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা থাকবে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট দলকে নিরাপত্তা দেয়ার মাধ্যমে ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে সোয়াত। সেসময় সিএমপির দুই সহকারী কমিশনার, দুই সাব-ইন্সপেক্টর ও তিন কনস্টেবলকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল ৭ সদস্যের সোয়াত টিম। এরা হলেন- সিনিয়র সহকারী কমিশনার মির্জা সায়েম মাহমুদ, সহকারী কমিশনার মাহমুদা বেগম, এসআই লিয়াকত আলী, এসআই সঞ্জয় কুমার সিনহা, কনস্টেবল মনির হোসেন, জুলফিকার হোসেন ও সিদ্ধার্থ বড়–য়া।

বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে মির্জা সায়েম মাহমুদ নগর পুলিশের বিশেষ শাখায় এডিসি হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। সহকারী কমিশনার মাহমুদা বেগম শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্বরত আছেন। এসআই লিয়াকত আলী আছেন সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগে। প্রশিক্ষণে আছেন ডিএমপিতে বদলীর আদেশপ্রাপ্ত এসআই সঞ্জয় কুমার সিনহা। আর পদোন্নতি পেয়ে এএসআই মনির হোসেন সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগে ও এএসআই জুলফিকার হোসেন শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত রয়েছেন। কনস্টেবল সিদ্ধার্থ বড়–য়া দায়িত্ব পালন করছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের গানম্যান হিসেবে; যা নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে সিএমপিতে কর্মরত আছেন সোয়াতের ৪ সদস্য। কাজের জন্য এই টিমের নেই কোন আলাদা যানবাহন ও দপ্তর। ফলে ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় সোয়াত টিমের সদস্যদের দেখা পাওয়াই দুষ্কর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট হলে ও ভিভিআইপির নিরাপত্তা দেওয়ার দরকার হলে সোয়াত টিমকে ঢাকা হয়। ওই সময় দায়িত্ব পালনের জন্য গাড়িসহ প্রয়োজনীয় সাপোর্ট পেতে বেগ পেতে হয় বিশেষ এই ইউনিটের সদস্যদের।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের আদলে তৈরি করা হয়েছিল সোয়াতকে। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় অত্যাধুনিক অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেন সোয়াত সদস্যরা। ঝুঁকিপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ অভিযান চালানোয় পারদর্শী বিশেষ এই টিম। সন্ত্রাসীদের কবল থেকে জিম্মি ব্যক্তিকে উদ্ধার, ছিনতাই হওয়া বিমান উদ্ধার এবং সন্ত্রাসী বা জঙ্গিদের গ্রেফতারে বিশেষ প্রশিক্ষণ রয়েছে তাদের। এছাড়া অত্যাধুনিক অস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় মূল্যবান সরঞ্জাম দেয়া হয়েছে সোয়াতকে। এই টিমের প্রতিটি সদস্যকে প্রশিক্ষণ দিতে যুক্তরাষ্ট্র ২৮ থেকে ৫৬ লাখ টাকা খরচ করেছিল। এতেই শেষ নয়; সোয়াটকে আটটি এম-৪ রাইফেল, আটটি গ্লোক-১৭ পিস্তল ও অর্ধলাখ রাউন্ড গুলি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব অস্ত্র-গুলি এফবিআইয়ের সদস্যরা ব্যবহার করে থাকেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএমপির সোয়াত টিমের এক সদস্য বলেন, ডিএমপির সোয়াত টিমে ৫০ জনের বেশী সদস্য রয়েছে। আর সিএমপির সোয়াত টিমে কাজ করার জন্য মাত্র ৭জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এরমধ্যে আবার দুইজন শান্তিরক্ষা মিশনে, একজন ডিএমপিতে বদলী। অন্যরাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন স্থানে কর্মরত রয়েছেন। এখন বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে সবাইকে একত্রিত করতে প্রচুর সময় লেগে যাবে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সোয়াত টিমের সদস্যদের অনুশীলনও হচ্ছে না।

সিএমপির সোয়াত টিমের কমান্ডার ও বিশেষ শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার মির্জা সায়েম মাহমুদ বলেন, সোয়াতের জন্য আলাদা বাজেট না থাকায় গাড়ি ও অফিসের ব্যবস্থা করা যায়নি। টিমের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া অস্ত্রগুলো ব্যবহার করে গত বছর সোয়াত সদস্য অনুশীলন করেছে। তবে চলতি বছর বৃষ্টির কারণে এখনো অনুশীলন করা যায়নি।