চট্টগ্রাম : শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির নামে কৌশলে শক্তিসঞ্চয় করছে বিএনপি। তাদের প্রথম লক্ষ্য- ধীরে ধীরে জনমত গঠন ও নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করা। তাতে সফল হলে মুহূর্তেই আগের চেহারায় ফিরে যাবে তারা। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করবে। মাঠে-ময়দানে কাছ করতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
একটি দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সূত্র পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির নামে বিএনপি সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। ব্যাপকভাবে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পেলে নির্বাচনের তিনমাস আগে তারা দেশে বড়ধরনের অস্থিরতা তৈরি করবে। আর এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াশীল ও স্বাধীনতাবিরোধী একটি গোষ্ঠীর সমর্থন ও সহযোগিতা লাভের চেষ্টা করছে দলটি। সেই গোষ্ঠীটিও চাইছে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকারও ভেবেছিল এই ইস্যু নিয়ে সহিংস আন্দোলনে যাবে বিএনপি। ফলে তাদের মোকাবিলায় সরকারও যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। কিন্তু বাস্তবে সেরকম কিছু ঘটেনি। এতে সাধারণ মানুষ ও সরকারের মাঝে আপাত স্বস্তি আসলেও বিএনপির শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি নতুন করে দ্বিধায় ফেলেছে রাজনীতি-সচেতনজন ও সাধারণ মানুষকে। সরকারও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বিষয়টি।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে প্রথমে দুইদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয় বিএনপি। এরপর মানববন্ধন, অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি পালন করে শান্তিপূর্ণভাবে। শনিবার সারাদেশে গণস্বাক্ষর অভিযান, রোববার দেশব্যাপী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান এবং মঙ্গলবার ঢাকা ছাড়া দেশের বাকি মহানগর ও জেলাগুলোতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে|
এসব কর্মসূচিতে একটু একটু করে প্রতিদিনই নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ ও স্বত:স্ফূর্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সমাবেশও করতে চায় দলটি। এভাবে ধীরে ধীরে সংগঠিত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নেমেছিল বিএনপি। হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও পোড়াও কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি দেশ-বিদেশে সহিংস রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সরকারও তাদের কঠোরভাবে দমন করার উপলক্ষ পায়। ফলে বারবার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় বিএনপির নেতিবাচক আন্দোলন কর্মসূচি। একদিকে ভাবমূর্তি সঙ্কট, অন্যদিকে সরকারের দমনপীড়ন- সবমিলিয়ে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে দলটি।
সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির নামে অত্যন্ত কৌশলে এগোনোর চেষ্টা করছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার সাজা ও কারাগারে পাঠানোর পরও বিএনপি কোনোধরনের সহিংস আচরণ করেনি। বরং বক্তৃতা-বিবৃতি ও কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শান্তিপ্রিয় নীতি অবলম্বন করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটা স্রেফ ‘আইওয়াশ’। মূলত তারা অপেক্ষা করছে চূড়ান্ত মরণকামড় দেওয়ার জন্য। আর এজন্য ধীরে ধীরে শক্তিমক্তা সঞ্চয় করছে বিএনপি।
এমনটা মনে করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফও। মঙ্গলবার একুশে পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘এটিতো আমরা বারবার বলে আসছি। বিএনপির বর্তমান রাজনীতির যে প্যাটার্ন, এটি তাদের প্রকৃত চরিত্র নয়। গত ১৫ বছর হিংসাত্মক ও ধংসাত্মক যে রাজনীতি তারা করেছে, তা থেকে রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে গেছে, এটি ভাবার কোনো কারণ নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘২০১৩ সালে জামায়াতের পক্ষ নিয়ে তারা যে নৈরাজ্য করেছে, পরে নির্বাচন বয়কটের নামে যেভাবে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে তা থেকে তারা ফিরে আসেনি। মুলত ওই সময় এবং ২০১৫ সালে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের বর্ষপুর্তিতে নাশকতার মামলায় যে সকল নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে তারা ভাবছে এভাবে আর সম্ভব নয়। তাই তারা এখন কিছুটা নিশ্চুপ থাকলেও মূলত ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির পথ খুঁজছে। দেশের মানুষকে এব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানান হানিফ।