:: আন্তর্জাতিক ডেস্ক ::
সবার জন্য উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত বছর ক্ষমতায় এসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এখন পর্যন্ত তার প্রতিশ্রুত উন্নয়নের অনেকগুলোই বাকী রয়েছে। এছাড়া ক্ষমতা গ্রহণের পর সরকারি কর্মকর্তা ও দলীয় নেতাকর্মীদের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় জড়িয়ে পড়া নিয়ে চাপের মুখে পড়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের জন্য আগামী দিনগুলো আরো কঠিন হতে পারে। সদ্য অনুষ্ঠিত বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির মাধ্যমে মোদিকে ঘৃণার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে সতর্ক বার্তা দিয়েছে বিহারবাসী।
বিশ্ব এবং বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় যখন ভারতের শক্তিশালী এবং গঠনমূলক ভূমিকা রাখার কথা ঠিক সেই সময়ে দেশটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং এ নিয়ে রাজনৈতিক কাঁদা ছোড়াছুড়ি চলছে। ভারতের ইতিহাসে ধর্ম এবং গরু নিয়ে সহিংসতার ব্যাপক নজির রয়েছে। এ বিষয়টিই দেশটিকে ক্রমান্বয়ে পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর এই দ্বন্দ্ব এমন এক সময়ে ঘটছে যখন দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এ সময়ে ভারতের অনেক নাগরিক সহিংসতার ভয়ে ভীত জীবন কাটাচ্ছেন।
রোববার ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম জনবহুল উত্তরাঞ্চলের বিহার প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ব্যাপক ব্যবধানে হেরেছে। বিধানসভার ২৪৩ আসনের মধ্যে নীতিশ কুমার নেতৃত্বাধীন মহাজোট ১৭৮ আসনে জয় পেয়েছে যেখানে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি মাত্র ৫৩ আসনে বিজয়ী হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মোদিকে প্রত্যাখ্যান করেছে বিহারের জনগণ। কেননা তিনি যে ইমেজ ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন তার প্রতিনিধিত্ব স্থানীয় প্রতিনিধিরা করেন না।
বিহার নির্বাচনের আগে বিজেপি এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য দায়ী। কেননা দলটির অনেক সংসদ সদস্য ভারতে গরু হত্যা ঠেকাতে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। দেশটির হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা গরুকে পবিত্র মনে করে। আর এই ইস্যুতেই হিন্দু-মুসলিম বিভাজন শুরু হয়।
ভারতে গত সাত সপ্তাহে গরু হত্যা, পাচার এবং চুরির গুজব ছড়িয়ে অন্তত চার মুসলমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া আগস্টে হিন্দু ধর্মের সমালোচনাকারী এক পণ্ডিতকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা গুলি করে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় শত শত লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা দেশটির জাতীয় পুরস্কার ফেরত দিয়েছেন।
তবে ভারতজুড়ে গুজব ছড়িয়ে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের হত্যা ও হামলার ঘটনায় নীরব থেকেছেন মোদি। এসব ঘটনায় সরকারের অনেক এমপি ও মন্ত্রীরা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকলেও মোদি নীরবে এসব বিষয়কে এড়িয়ে গেছেন।
বিহারের ভোটাররা এ বছর বিজেপির বিভাজন তৈরির প্রচেষ্টা দেখেছেন। অধিকাংশই ভারতীয় নাগরিকের মতো ওই প্রদেশের নাগরিকরা এমন নেতার খোঁজ করছেন যিনি বিহারকে তাদের জন্য মানসম্মত বসবাসস্থল হিসেবে তৈরি করতে পারবেন। ভারতের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোর মধ্যে বিহার অন্যতম। গত ১০ বছরে মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের নেতৃত্বে এই প্রদেশে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। নীতিশের সময়ে বিহারে অপরাধ কমে এসেছে, প্রচুর রাস্তাঘাট তৈরি হয়েছে, স্কুলে মেয়েদের ভর্তি হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে।
অর্থনৈতিক সংস্কারের স্লোগান নিয়ে মোদি এবং তার দল বিজেপি গত বছর নিম্ন কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় লাভ করে। কিন্তু বর্তমানে মোদির সেই সংস্কারে তেমন গতি নেই। এই মুহূর্তে মোদি যদি তার দল ও সরকার থেকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন তাহলে আগামী দিনগুলো তার জন্য আরো কঠিন হয়ে উঠবে।
