শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২

চট্টগ্রাম আদালতে ‘ঘুষের’ টাকা সঞ্চয়ে চলছে প্রতিযোগিতা!

| প্রকাশিতঃ ১৪ জুলাই ২০১৬ | ১০:৪১ অপরাহ্ন

chittagong courtচট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের আদালত এলাকায় দৈনিক ভিত্তিতে ঘুষের টাকা সঞ্চয় সংগ্রহ করেন নাম সর্বশ্ব মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ নামধারী এনজিও। দৈনিক ভিত্তিতে ঘুষের টাকা সঞ্চয় করতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন, জেলা রেজিষ্ট্রী অফিস ও আদালতের পেশকার-পিয়ন-উমেদার-পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে এক ধরণের অসুস্থ প্রতিযোগিতা।

ফলে ঘুষের চাহিদা মেটাতে গিয়ে দূর্ভোগে পড়ছে বিচারপ্রার্থী জনগণ। এসব এনজিও’র লাগাম ধরতে পারলে আদালত এলাকায় অনেকাংশে ঘুষ দূর্নীতি কমবে বলে মনে করেন বিচারপ্রার্থী জনগণ।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনজীবী, আইনজীবী ক্লার্ক, বিভিন্ন জিআরও সেকশনে কর্মরত উমেদারের নিয়ন্ত্রণ ও মালিকানাধিন এসব এনজিও হওয়ায় প্রতিবাদ ও প্রতিরোধও করছে না কেউ।

চট্টগ্রাম আদালত পাড়ায় প্রতিদিন সঞ্চয় তুলেন এরকম এনজিও’র সংখ্যা ২০টিরও বেশী। তৎমধ্যে স্কিম মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি, এ্যাকটিভ মাল্টিপারপারস কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, এ্যালেক্স মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি, রিয়েল মিশন মাল্টিপারপারস কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, প্রমিস মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি, সানবার্ড মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি, আমাদের ফাউন্ডেশন, সমমনা শ্রমজীবী সমবায় সমিতি, সিডিপি সঞ্চয় ও ঋণদান কর্মসূচী উল্লেখযোগ্য।

এসব সঞ্চয়ী সংস্থাগুলো’র লোকজন প্রতিদিন আদালত এলাকায় কাজ করার পাশাপাশি সরকারী কর্মচারীদের কাছ থেকে দৈনিক হারে সঞ্চয় আদায় করেন। দৈনিক সর্বনিন্ম ১শত টাকা থেকে সর্বোচ্চ হাজার টাকা সঞ্চয় নিয়ে থাকেন তারা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সানবার্ড মাল্টিপারপাস এর চেয়ারম্যান পার্থ সারথী নাথ একজন সরকারি কর্মচারী। তিনি রাঙ্গুিনয়া ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার হিসেবে কর্মরত। স্কিম মাল্টিপারপাস কো-অপরারেটিভ সোসাইটির মালিকানায় রয়েছেন আইনজীবী সহকারি বিধান চন্দ্র কান্তি।

অ্যালেক্স মাল্টিপারপাসের মালিকানায় আছেন একজন আইনজীবী ও চন্দনাইশ জিআরও অফিসের উমেদার মোহাম্মদ আনোয়ার উল্লাহ। ‘সমমনা শ্রমজীবী সমবায় সমিতি’ মালিকানায় রয়েছেন বিধান চন্দ্র শীল। তিনি বর্তমানে মুরাদপুর ভূমি অফিসে সার্ভেয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন।

জানতে চাইলে নিজেকে ‘সমমনা শ্রমজীবী সমবায় সমিতি’র পরিচালক বলে স্বীকার করেন বিধান চন্দ্র শীল। সরকারি কর্মচারী হয়ে সমিতির কার্যক্রম চালাতে পারেন কি-না প্রশ্ন করলে বিধান চন্দ্র শীল বলেন, ‘আসলে আমি না, আমার এক বড়ভাই এটি পরিচালনা করেন।’

ব্যাংকিং আইন পরিপন’ী কাজ করার অভিযোগের বিষয়ে বিধান বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান দৈনিক ২০ টাকা আদায় করে। একশত থেকে এক হাজার আদায় করার অভিযোগ সঠিক নয়।’

স্কিম মাল্টিপারপাস কো-অপরারেটিভ সোসাইটির মালিক বিধান চন্দ্র কান্তি ওরফে বিন্দু বলেন, ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলছে। আমাদের সমিতিতে আইনের পরিপন’ী কোনো কাজ নেই। আদালতের পেশকার, পিয়ন, উমেদাররা মাস শেষে বেতন পান। তাদের কাছ থেকে দৈনিক ভিত্তিতে আদায় করা টাকার উৎস কি? এমন প্রশ্ন করলে নিরুত্তর থাকেন বিধান চন্দ্র কান্তি।

আইন মতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ব্যতীত সঞ্চয় সংগ্রহ কিংবা ঋণ দানসহ কোন ব্যাংকিং সেবা দিতে না পারার বিধান থাকলেও এসব মাল্টিপারপাস গুলো ব্যাংকের ন্যায় ন্যুনতম ১’শ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক ডিপিএস সংগ্রহ করে থাকে।

দূর্নীতি দমন কমিশন সূত্র জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে দূর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫ ধারায় এধরনের ঘুষের টাকা লেনদেনের সাথে জড়িত সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারে।

এ প্রসঙ্গে আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. কপিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এব্যাপারে আমি প্রথম আপনার কাছ থেকে শুনলাম। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।