মেয়ের কথা মনে পড়লে মধ্যরাতেও কক্সবাজার ছুটে যান মেয়র নাছির!

চট্টগ্রাম : প্লে থেকে দ্বাদশ শ্রেণী- পুরো সময়টা বাবার অপত্য স্নেহে বড় হয়েছে মেয়েটি। যতই ব্যস্ততা থাকুক, থাকুক মিছিল-মিটিং- বাবাই তাকে সাতসকালে স্কুলে পৌঁছে দিতেন। রাজনীতির উত্তাল, অস্থির সময়টুকু ছাড়া শিক্ষাজীবনের বারোটি বছর নিয়মিত এই কাজটিতে বাবার ব্যত্যয় ঘটেনি। সেই বাবাই আজ মেয়ের কাছ থেকে দূরে, বহু দূরে!

চাইলেও মেয়েকে তিনি আর স্কুল-কলেজে পৌঁছে দিতে পারেন না। পারেন না আদর-মমতায় আগের মতো কাছে টেনে নিতে। গল্পটি চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও তাঁর একমাত্র কন্যা ফাহমিদা তাসনিম নওশিনের।

বাবা আ জ ম নাছির মনে করেছিলেন, বড় সন্তান নওশিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজেই ভর্তির সুযোগ পাবে। কিন্তু মেধাক্রমে ভর্তির সুযোগ পেলো কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে। বাবার চাওয়াটা পূরণ হয়নি। চাইলে মেয়েকে ট্রান্সফার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসা কিংবা সেখানেই ভর্তি করানো কঠিন কিছু নয়। কিন্তু বাবা তা না করে মেয়েকে সোজা কক্সবাজার দিয়ে আসেন।

২০১৬-১৭ সেশনে ভর্তি করিয়ে দেন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে। মেয়েকে হোস্টেলে রেখে একবুক কষ্ট নিয়ে ফিরেন। এই কষ্ট মেয়ে থেকে দূরে থাকার কষ্ট, সকাল-সন্ধ্যা মেয়ের ‘বাবা’ ডাক শুনতে না পাওয়ার কষ্ট। প্রায় দুবছর ধরে সেই কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছেন বাবা আ জ ম নাছির।

তাই কখনো কখনো মধ্যরাতেও ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলেন। বলেন, কক্সবাজার চলো। মনটা কেঁদে উঠলে এভাবেই যখন-তখন মেয়ের কাছে ছুটে যান। কখনো বা ছুটে যান প্রটোকলের তোয়াক্কা না করে।

আপনি চট্টগ্রামের মেয়র, সরকারি দল আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার পরও আপনার আদরের মেয়েটাকে কক্সবাজার ফেলে রাখলেন? বুধবার (৪ জুলাই) রাতে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে এমনই প্রশ্ন ছিলো একুশে পত্রিকার।

জবাবে মেয়র নাছির বলেন, তা ঠিক। আমি চাইলে হয়তো মেয়েটাকে ট্রান্সফার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসা যেতো। কিন্তু আমি তা করিনি। তখন হয়তো বলতো, আমি প্রভাব বিস্তার করছি। আমার পক্ষে-বিপক্ষের কত মানুষই তো আছে! তাই সচেতনভাবে সুযোগটি এড়িয়ে গেছি।’

এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, শত ব্যস্ততার মাঝেও মেয়েকে প্রচুর মিস করি। খুব বেশি মনে পড়লে কর্মব্যস্ততার ফাঁকে চট করে মেয়ের কাছে চলে যাই। একটু দেখা করে ফিরে আসি। এসময় মেয়ের জন্য সবার দোয়া চান তিনি।

অভিভাবকদের যেমন কষ্ট, তেমনি সন্তানেরও কষ্ট। তাছাড়া আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে দুইপক্ষের ভোগান্তি, সময় নষ্ট। চট্টগ্রামে ট্রান্সফার করে নিয়ে আসলে কেউ সমালোচনা করলেও করুক তাতে কী এসে যায়- এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘হোক না একটু কষ্ট। কষ্টস্বীকারের ফল ‘ভালো’ হয়। আমি চাই মেয়ে নিজের মতো করে গড়ে উঠুক। প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশের জন্য অবদান রাখুক।’

মেয়রের একান্ত সচিব (পিএস) রায়হান ইউসুফ বলেন, ‘মেয়র মহোদয় নিজের এবং পরিবারের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার কখনো করেন না। ফলে মেয়ে নিজ যোগ্যতায় যেখানে সুযোগ পেয়েছে তাই গ্রহণ করেছেন, মেয়ের যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।’

মেয়ের কথা মনে পড়লেই তিনি কক্সবাজার চলে যান। কাজের যেন ক্ষতি না হয় সেজন্য অনেক সময় রাতেও রওয়ানা দেন। মেয়েকে একনজর দেখে কঠিন জার্নি করে সময়মতো আবার কর্মস্থলে ফিরে আসেন। মেয়েটা মাশাল্লাহ অনেক মেধাবী। জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি সবটাতে গোল্ডেন জিপিএ। ব্যক্তিজীবনে বেশ ভদ্র, বিনয়ী, লক্ষ্মী একটা মেয়ে। এটা মেয়ে নয়, মেয়র মহোদয়ের ঘরে সৃষ্টিকর্তা ভাগ্যলক্ষ্মী দিয়েছেন। মেয়র মহোদয়ের অপর সন্তান ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র আবু সাদিক মো. তামজিদও অসম্ভব মেধাবী, ভদ্র- যোগ করেন পিএস রায়হান ইউসুফ।

সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে মেয়রের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ব্যক্তিগত সহকারি (পিএ) মোহাম্মদ সৈয়দ। একুশে পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড ব্যস্ততার মাঝেও মেয়ের মহোদয় মেয়ের ফোন ধরেন। এমনিতেই মেয়র মৃদুভাষী। মেয়ের সঙ্গে যখন কথা বলেন তখন স্বর আরও মৃদু হয়ে যায়। মেয়েকে ‘আপনি’ সম্বোধন করেন। মেয়েটাই যেন তাঁর সব। বাবা-মেয়ের এমন সুমধুর, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমি কোথাও দেখিনি।’

একুশে/এটি