মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট নিয়ে ভারতীয় নাগরিকের ‘রহস্যজনক’ ঘোরাফেরা!

কক্সবাজার প্রতিনিধি : ”পেট কী লিয়ে ধান্দা” এই বুলি দিয়েই কক্সবাজারে রহস্যজনকভাবে  ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক ভারতীয় নাগরিক। গোপী (৪৮) নামের ভারতের এ নাগরিকের ভারতীয় পাসপোর্টের মেয়াদও ২০১৬ সালের ১৮  ডিসেম্বর শেষ হয়ে গেছে। পাসপোর্টে ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ আছে-পাকশিরাজাপুরা, কর্ণাটক, ব্যাঙ্গালোর। পাসপোর্ট নং-জি ১০০৬৯৩৫। যা ইস্যু করা হয় ২০০৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর।

বর্তমানে কক্সবাজারের পর্যটন এলাকায় দোকানে দোকানে ফেরি করে বেড়াচ্ছেন ভেষজ ও প্যাকেটজাত ভারতীয় হারবাল ওষুধ ও তেল। প্রতিটি ওষুধ ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকেন। এসব ওষুধে কিডনি রোগ থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে নিশ্চয়তাও দিয়ে থাকেন তিনি।

সম্প্রতি কলাতলীতে একটি ওষুধের দোকানে তাকে এসব বিক্রি করতে দেখা যায়। এসময় তার সাথে কথা বলতে চাইলে এড়িয়ে যেতে চান। পরে ক্রেতা সেজে ওষুধের ব্যাপারে জানতে চাইলে কথা বলেন। ঘণ্টাখানেকের আলাপচারিতায় তিনি রহস্যজনক আচরণ করেন। কখনো বলেন তিনি বেড়াতে এসেছেন, আবার বলেন সিলেট, ঢাকা ও কক্সবাজারে এসব ওষুধ ফেরি করে বেড়ান। হিন্দি ভাষায় আলাপকালে বারবার তাকে ‘পেট কে লিয়ে ধান্দা’ এই কথা বলতে শোনা যায়।

এক পর্যায়ে তার কাছে থাকা পাসপোর্ট দেখতে চাইলে কিছুটা ইতস্তত বোধ করেন গোপী। যদিও পরে সেটি দেখাতে রাজি হন। তাতে দেখা যায়, দুই বছর আগেই এ ভারতীয় নাগরিকের পাসপোর্টের মেয়াদোত্তীর্ণ। বাংলাদেশে ভিসার মেয়াদও নেই। শুধু তাই নয়, পাসপোর্টে দেখা যায়, এর আগে ভারতীয় এ নাগরিক থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আফ্রিকার চারটি দেশ ভ্রমণ করেছেন। পাসপোর্টের মেয়াদ পেরিয়ে যাবার বিষয়ে গোপী জানান, তার কাছে আরেকটি পাসপোর্ট রয়েছে। সেটির মেয়াদ একমাস আছে। নবায়নের জন্য আবেদন করবেন শিগগির। তবে তাৎক্ষণিকভাবে একমাসের মেয়াদ থাকা পাসপোর্টটি দেখাতে পারেননি তিনি। পরে  কথা না বাড়িয়ে তিনি দ্রুত দোকান থেকে কেটে পড়েন।

সর্বশেষ, রোববার (১১ নভেম্বর) সকালে এই ভারতীয় নাগরিককে রামু এলাকায় দেখা যায়। এসময় তার সাথে কুশল বিনিময় করে কথা বলতে চাইলে সটকে পড়তে চান। একপর্যায়ে জানান তিনি কলাতলীতে থাকেন। যদিও এর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। পরে একজন শিখ ধর্মালম্বী ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে সিএনজি করে কক্সবাজারের দিকে চলে যান।

কক্সবাজারের একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বিপণনকর্মী সায়েম চৌধুরী দুলু একুশে পত্রিকা জানান, ভারতীয় এ নাগরিকের চলফেরা, কথাবার্তা সবটাই রহস্যজনক। দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। অথচ তার পাসপোর্টের মেয়াদোত্তীর্ণ হয় দুই বছর আগে। তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন থাইল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকার চারটি দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আর এখন তিনি অবৈধভাবে কক্সবাজারে ঘুরছেন আর লতাপাতার ওষুধ বিক্রি করছেন। তিনি একেক সময় একেক ধরনের কথা বলেন। কখনো বলেন পেটের দায়ে কক্সবাজারে ঘুরছেন। বলে বেড়ান তিনি একা এসেছেন। আবার পরক্ষণেই জানান তার স্ত্রীও সঙ্গে আছেন। তার এমন অসংলগ্ন কথাবার্তায় স্থানীয়রা প্রশ্ন করলে কৌশলে তিনি পালানোর চেষ্টা করেন।

দুলুর মতে, ভেষজ ওষুধ বিক্রি নয়, এর আড়ালে তার অন্যকোনো মতলব থাকতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোমবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, কক্সবাজারে লক্ষাধিক দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন। তাদের সবার উদ্দেশ্য বা তথ্য আমাদের জানা সম্ভব নয়। তবে কারো বিষয়ে আপনাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে আমাদের দিতে পারেন। আমরা সেটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

একুশে/আরএইচ/এটি