আকমাল হোসেন : নানা অভিযোগে গ্রেফতার হওয়াদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি বিশেষ সফটওয়্যার তৈরী করেছেন চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (পশ্চিম) মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম।
এই সফটওয়্যারে এমনভাবে তথ্য সংরক্ষিত থাকবে, যার ফলে দ্বিতীয়বার কোন অপরাধীকে গ্রেফতারের পর তার ফিংগার প্রিন্ট দিলেই পরিচয় শনাক্ত ও অতীত অপরাধ রেকর্ড জানা যাবে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে।
সম্প্রতি অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম বলেন, প্রথমবার কেউ গ্রেফতার হলে তার ফিংগার প্রিন্টসহ নানা তথ্য সফটওয়্যারে আপলোড করে ফেলা হবে। এরপর দ্বিতীয়বার একই ব্যক্তি গ্রেফতার হলে ফিংগার প্রিন্ট নেওয়ার সাথে সাথে তার আগের সব তথ্য কম্পিউটারে ভেসে উঠবে।
কোনও অপরাধীকে প্রথমে গ্রেফতারের পর তার পরিচয় শনাক্ত ও অতীত অপরাধ রেকর্ড (পিসিআর) জানতেই অনেকটা সময় চলে যায়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় অপরাধীরা নিজেদের আড়াল করতে মিথ্যা তথ্যের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। এর ফলে অনেক সময় তদন্তেও বিলম্ব হয়ে যায়।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, একবার গ্রেফতার হওয়া কোন অপরাধী কয়েক মাস বা বছর পর আবার গ্রেফতার হচ্ছেন। বেশভূষা বদলের কারণে কোন কোন সময় এ ধরনের অপরাধীদের দ্রুত চিনতে কষ্ট হয়ে যায় কর্মকর্তাদের। কেউ কেউ আবার অতীত ঢাকতে তথ্য গোপনের চেষ্টা করেন।
এমন অবস্থায় উক্ত সফটওয়্যারটির কার্যকর ব্যবহার করা গেলে পরিচয় গোপন করা সম্ভব হবে না ও মুহূর্তেই একজন অপরাধীর বিস্তারিত তথ্য পুলিশ জানতে পারবে বলছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, অনেকে ধরা পড়ার পর ভুল নাম দিয়ে জামিনে গিয়ে পালিয়ে যায়। ফলে ভুল লোককে অনেক সময় জেলে যেতে হয়। যার নজিরও আছে। সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা হলে সে ধরনের ঘটনা ঘটবে না।
এই ডাটাবেজে এমনভাবে তথ্য সংরক্ষিত থাকবে, যার ফলে অপরাধীর পক্ষে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তদন্ত কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করা সম্ভব হবে না। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধীর আঙুলের ছাপ নেওয়ার সুযোগ থাকছে এতে।
এছাড়াও ছবি, অতীত অপরাধ সংঘটনের সংখ্যা, সময়, অপরাধের ধরন, দণ্ড সংক্রান্ত তথ্যও সংযুক্ত করা যাবে। এসব তথ্যের সঙ্গে অপরাধীর নাম, ঠিকানা, পেশা ইত্যাদি ব্যক্তিগত বিস্তারিত তথ্য থাকছে। ফলে কেউ যদি আগে এক বা একাধিকবার কোনও অপরাধ করে, তবে তার পূর্ব ইতিহাস প্রোফাইলসহ দেখা যাবে তারই আঙ্গুলের ছাপে।
এর আগে কারাগারে যাওয়া আসামিদের তথ্য সংগ্রহের জন্য র্যাব একই রকম একটি ডাটাবেজ করলেও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোন কার্যক্রম এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (পশ্চিম) মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমি যে সফটওয়্যারটি তৈরী করেছি, সেটা এখনো অফলাইনে। এটি ‘পাইলট টেস্টিং’ পর্যায়ে আছে। এটা এক ধরনের ডিজিটাল রেজিস্ট্রার। যাতে অপরাধীর সকল ধরনের তথ্য, মোবাইল নাম্বার ও জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার, ছবি, ফিংগার প্রিন্ট সংরক্ষিত থাকবে।
তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে অপরাধস্থল হতে ফিংগার প্রিন্ড সংগ্রহ তথা স্ক্যান করা যায় কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটি করা গেলে ফরেনসিকে একটা বিরাট পরিবর্তন আসবে।
পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম বলেন, উক্ত বিষয়টি ঊর্ধ্বতন স্যারদের আমি শিগগিরই জানাবো। স্যাররা সম্মতি দিলে সফটওয়্যারটা অনলাইন করে সিএমপির সব ইউনিট ও থানায় কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যাবে।
এতে অপরাধী সনাক্ত করতে পুলিশকে আর বেগ পেতে হবে না বলেও মন্তব্য করেন গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা।