রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

চাঞ্চল্যকর পায়েল হত্যা: ‘স্বীকারোক্তি’ অস্বীকার করলেন বাসচালক (ভিডিও)

প্রকাশিতঃ ১৩ মার্চ ২০১৯ | ৫:৫৬ অপরাহ্ন


চট্টগ্রাম: নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. সাইদুর রহমান পায়েলকে আহত অবস্থায় সেতু থেকে খালে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করে হানিফ পরিবহনের ওই বাসের চালক আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন তা মারধর করে আদায় করা হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুধবার চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন হানিফ পরিবহনের চালক জামাল হোসেন (৩৫)

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র পায়েলের বাসা চট্টগ্রামের হালিশহর সিডিএ আবাসিক এলাকায়।

গত বছরের ২২ জুলাই রাতে দুই বন্ধু আকিবুর রহমান আদর ও মহিউদ্দিনের সঙ্গে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে রওনা হওয়ার পর নিখোঁজ হন তিনি। পরে মুন্সিগঞ্জের ভাটেরচর সেতুর নিচের খাল থেকে পায়েলের লাশ উদ্ধার করা হয়।

হানিফ পরিবহনের ওই বাসের চালকসহ তিন কর্মচারীকে গ্রেফতারের পর পুলিশ বলেছে, গজারিয়া এলাকায় গাড়ি যানজটে পড়ায় প্রস্রাব করার কথা বলে বাস থেকে নেমেছিলেন পায়েল। বাস চলতে শুরু করলে তিনি দৌড়ে এসে ওঠার সময় দরজার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সংজ্ঞা হারান। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার বদলে দায় এড়াতে ভাটেরচর সেতু থেকে নিচের খালে ফেলে বাস নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন চালক ও সুপারভাইজার। একই কথা তুলে ধরে চালক ও সুপারভাইজার আদালতে ‘স্বীকারোক্তিও’ দেন।

এ বিষয়ে বুধবার চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে চালক জামাল হোসেন বলেন, জ্যাম ছাড়ার পর গাড়ি সামনে না টানলে পেছনের গাড়ি হর্ন দেয়। তখন আমাকে সামনে যেতে হয়। আমি যখন সামনে যাচ্ছি, ছেলেটা বললো আপনি সামনে যান, আমি আসছি। আমি হেঁটে কিছুদূর গিয়ে উঠবো। তখন আমরা সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছি, তার আর খবর নেই। তারপর কী হয়েছে আমি আর কিচ্ছু জানি না, আল্লাহপাক জানে।

তিনি বলেন, পুলিশ আমাদেরকে দেখা করতে বলেছে। ছোট ভাইকে নিয়ে আমি মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার অফিসে গিয়েছি। তার আগেরদিন বাসের সুপারভাইজার গিয়েছে। আমাদেরকে সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বসিয়ে রাখার পর হাতকড়া পরিয়ে রেখে বলে, আসামি পেয়ে গেছি। রাতে আমাকে অজস্র মারলো। আমার দাঁড়ি টেনে উল্টে ফেলেছে। জানতে চেয়েছে, নামাজ পড়ো? আমার হাঁটু থেকে লোম ছিঁড়ে ফেলেছে।

জবানবন্দিতে সুপারভাইজার ও নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করা প্রসঙ্গে চালক জামাল বলেন, এসব মিথ্যা কথা। পুলিশের মাইরের কারণে এসব সে বলেছে। স্বীকারোক্তি দিতে আমাকেও মেরেছে। পুলিশ বলেছে, বাদী পক্ষ খুব ভালো। যেভাবে বলেছি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সেভাবে বলবে। তিনদিন পর ওনারা তোমাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে।

এদিকে গত বছরের ৪ অক্টোবর পায়েল হত্যা মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আদেশে মামলাটি বিচারের জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। মামলার তিন আসামি উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে আছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নাজিম উদ্দিন জানান, পায়েল হত্যা মামলায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে উপস্থিতির জন্য বুধবার দিন ধার্য্য ছিল। তবে বিচারক না থাকায় কিছুই হয়নি। বাদী ও আসামিরা এসে ফিরে গেছেন।