চট্টগ্রাম : চলন্ত বাস থেকে লাফ দিলেই নিশ্চিত মৃত্যু। সেটা জেনেও বাস-সহকারির ‘যৌনহয়রানি’ থেকে বাঁচতে চলন্ত বাস থেকেই লাফ দিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। তার কাছে জীবনের চেয়ে সম্ভ্রম গুরুত্বপূর্ণ। তাই সম্ভ্রম বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নেয়া মেয়েটির জীবন-সম্ভ্রম দুটোই ভাগ্যক্রমে রক্ষা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু শরীর ও মনের ক্ষত তাকে দগ্ধ করছে প্রতিনিয়ত।
বাস থেকে লাফ দেয়ার পর এক রিক্সাচালকের সহযোগিতায় বাসায় পৌঁছতে সক্ষম হলেও ওই ছাত্রী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে বাসায় অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে পৌনে ৪টার দিকে নগরের স্টেশন রোড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন সুইট একুশে পত্রিকাকে বলেন, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানাধীন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে নগরীর নিউমার্কেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ৩নং রুটের বাসে ওই ছাত্রীটি বাস-হেলপারের লাঞ্ছনার শিকার হন।
তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী ঘটনার দিন বিকেলে ক্লাস শেষ করে আনুমানিক ৩ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ১ নং গেইট হতে ৩ নং বাসে ওঠেন। বাসটি নগরের রিয়াজুদ্দিন বাজার এলাকায় পৌঁছালে ভুক্তভোগী ছাড়া সকল যাত্রী একে একে নেমে গেলে তিনি একা হয়ে যান। এসময় হঠাৎই বাসটি তার রুট পাল্টে স্টেশন রোডের দিকে চলতে শুরু করে। তখন ভুক্তভোগী মেয়েটি নিরাপত্তার স্বার্থে বাস ড্রাইভারকে বাস থামাতে বললে হঠাৎই বাসের হেলপার তার দিকে ধেয়ে যায় এবং তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তার শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে। সেসময় দম বন্ধ হয়ে আসলে মেয়েটি আত্মরক্ষার্থে তার হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে হেলপারটিকে আঘাত করে চলন্ত বাস থেকেই লাফ দেয়। এবং এক রিক্সাওয়ালার সাহায্যে শরীরে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে বাসায় ফিরেন।
ঘটনার সময় বাসের ড্রাইভারটিও “মেয়েটাকে ধর ধর” বলে হেলপারকে উৎসাহ যোগাচ্ছিল বলে ওই ছাত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে একুশে পত্রিকাকে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদারিপুর ছাত্রসমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন সুইট।
এদিকে এই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে ওই ছাত্রী ফেসবুকে ইংরেজিতে একটি পোস্ট দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। সেই পোস্টে বাস-সহকারির যৌনহয়রানির চেষ্টা, তাতে চালকের ইন্ধন এবং জীবনের বিনিময়ে সম্ভ্রম রক্ষায় তার সাহসী পদক্ষেপের বর্ণনা দেয়ার পর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন; বলেন, ‘এইদেশে আর থাকবো না ভাই।
এ ঘটনায় বাস-সহকারি ও চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানোর পাশাপাশি অনেকেই ভুক্তভোগী ছাত্রীটিকে অসীম সাহসী, প্রতিবাদি আখ্যা দেন পোস্টের নিচে কমেন্ট করে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন জানান, এই ধরনের অভিযোগ নিয়ে এখনো পর্যন্ত তার কাছে কেউ আসেননি। একুশে পত্রিকার কাছে ঘটনাটি শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন ওসি মহসীন; তিনি বলেন, যেভাবেই হোক আমাদের সঙ্গে মেয়েটির যোগাযোগ করিয়ে দেন, অথবা তিনি নিজ থেকে যোগাযোগের জন্য এ সংক্রান্ত কোনো লিংক থাকলে তাকে দিতে বলেন। সমাজে নারীদের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় এসব অপরাধীদের লাগাম টানতে আমরা বদ্ধপরিকর।-বলেন ওসি মহসীন।
একুশে/এটি