বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের রানের রেকর্ড


ঢাকা: বাংলাদেশের বিপক্ষে টসে হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৮৬ রান সংগ্রহ করেছে ইংল্যান্ড। ফলে বাংলাদেশের টার্গেট দাড়িয়েছে ৩৮৭ রান। স্বাগতিকদের বিপক্ষে আজ জয় পেলেই টানা তিন বিশ্বকাপে ইংলিশদের হারানোর বিরল এক রেকর্ডে নাম লেখাবে টাইগাররা।

ওপেনিংয়ে বল করতে এসে শুরু থেকেই দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন সাকিব আল হাসান। অপর প্রান্তে দারুণ বল কেেছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও।ইংলিশদের দুই ওপেনার যেখানে আগ্রাসী ব্যাট করতে পছন্দ করেন, সেখান দুই ব্যাটসম্যানকেই খোলসে আটকে রাখেন তারা।

শুরুটা সাবধানে করলেও ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেশ হাত খুলে ব্যাট করেন দুই ইংলিশ ওপেনার জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টো। প্রথম পাঁচ ওভারে মাত্র ১৫ রান নিলেও দলীয় ফিফটি তারা স্পর্শ করেন ৭.৫ ওভারেই। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের শুরুটা জেসন শুরু করলেও তার সঙ্গে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে শুরু করেন বেয়ারস্টোও।

বাংলাদেশের বোলারদের ভোগান্তি বাড়িয়ে দেয় জেসন রয়। শুরু থেকেই মারমুখী ছিলেন তিনি। সে ধারায় তুলে নেন নিজের সেঞ্চুরি। মাত্র ৯২ বলেই এ তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছান এ ওপেনার। ১২টি চার ও ১টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। ১২০ বলে ১৫৩ রান করে আউট হন তিনি। ক্যারিয়ারে এটা তার নবম সেঞ্চুরি।

ইংলিশদের ব্যাটিং আগ্রাসন ধরে রেখে ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন ওপেনার জনি বেয়ারস্টোও। চলতি বিশ্বকাপে এটা তার প্রথম ফিফটি। দারুণ ব্যাটিং শৈলী উপহার দিয়ে মাত্র ৪৮ রানে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। এ রান করতে মেরেছেন ৬টি চার।

১৯ ওভারে ইংল্যান্ডের ওপেনিং জুটি ভাঙেন মাশরাফি। প্রথম পাঁচ ওভার দেখে খেলার পর থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে যাচ্ছিল ইংল্যান্ড। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ১২৮ রানের সংগ্রহ। তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে মেহেদী হাসান মিরাজের তালুবন্দি হন জনি বেয়ারস্টো।

রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে মাশরাফির করা বলটি কিছুটা বাড়তি বাউন্স ছিল। লেগে ঘোরাতে চেয়েছিলেন বেয়ারস্টো। ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ উঠলে তা ঝাঁপিয়ে পড়ে লুফে নেন মিরাজ। আউট হওয়ার আগে ৫০ বলে ৫১ রান করেছেন এ ওপেনার।

এরপর উইকেটে নেমেই আক্রমণাত্মক ব্যাট চালান জস বাটলার। তার সঙ্গে যোগ দেন অধিনায়ক ইয়ন মরগানও। উইকেটে নেমেই ঝড় তুলছিলেন বাটলার। তুলে নিয়েছিলেন নিজের হাফসেঞ্চুরিও। রানের গতি আরও বাড়াতে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েছেন এ ব্যাটসম্যান।

সাইফউদ্দিনের বলে স্কোয়ার লেগে দাঁড়ানো সৌম্য সরকার কয়েক পা এগিয়ে সহজ ক্যাচ ধরেছেন। তবে আউট হওয়ার আগে কার্যকরী ৬৪ রানের ইনিংস খেলেছেন বাটলার। ৪৪ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কার সাহায্যে এ রান করেন তিনি। চতুর্থ উইকেটে মরগানের সঙ্গে ৯৫ রানের জুটি গড়েন বাটলার।

বাটলারের বিদায়ের পর মরগানকেও দ্রুত বিদায় করে টাইগাররা। দারুণ ক্যাচ লুফে নেন সৌম্য সরকার। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লংঅনে ধরা পড়েছেন সৌম্যর হাতে। ৩৩ বলে ১টি চার ২টি ছক্কায় ৩৫ রান করেছেন মরগান।

বাউন্সি উইকেটে বাংলাদেশের দুর্বলতা জেনেই হয়তো একজন বেশি পেসার দলে অন্তর্ভুক্ত করেছে ইংল্যান্ড। লিয়াম প্লাঙ্কেটকে একাদশে অন্তর্ভুক্ত করেছে দলটি। লেগ স্পিনার আদিল রশিদের জায়গায় নেয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে মইন আলিকে বাদ দেয় দলটি। বাংলাদেশের লেগ স্পিন দুর্বলতার কথাও তাদের অজানা নয়। এছাড়াও বাংলাদেশের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানই বাঁহাতি। সে কারণেই হয়তো এ সিদ্ধান্ত।

শেষ দুই ম্যাচে খেলা একাদশ নিয়েই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনের জায়গায় রুবেলের হোসেনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে গুঞ্জন ছিল। কারণ গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সঙ্গে জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাইফউদ্দিনেই আস্থা রেখেছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অসাধারণ জয়। দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও দারুণ লড়াই। স্নায়ুচাপ ধরে রাখতে পারলে হয়তো সে ম্যাচে জিতত বাংলাদেশই। কিন্তু অল্প পুঁজি নিয়ে লড়াই করে ক্রিকেট বিশ্বকে নতুন বার্তা দিয়েছে টাইগাররা। এবার তাদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।

যাদের বিপক্ষে এর আগের দুটি বিশ্বকাপেই জয় বাংলাদেশের। এবারও সে ধারা ধরে রাখতে চায় তারা। সে লক্ষ্যে শুরুটাও ভালো হয়েছে তাদের। টস জিতেছে নিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। বেছে নিয়েছেন ফিল্ডিং। বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টায় শুরু হবে ম্যাচটি।

২০১১ সালে চট্টগ্রামে রোমাঞ্চে ঠাসা রান তাড়ায় ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৫ সালেও ফের রোমাঞ্চ আর উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচ। সেবার অ্যাডিলেডে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সেঞ্চুরি আর রুবেল হোসেনের শেষের স্পেলে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে দিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার কার্ডিফে ইংল্যান্ডকে বিশ্বমঞ্চে টানা তিনবার হারানোর সুযোগ মাশরাফি বিন মর্তুজার দলের। এই সুযোগ নিতে মরিয়া বাংলাদেশ অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে ইংলিশদের শক্তির কথা মাথায় রেখে নিয়েছে নতুন কৌশল।

বিশ্বকাপে এর আগে মোট তিনবার মুখোমুখি হয়েছে ইংল্যান্ড আর বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড জিততে পেরেছে কেবল ২০০৭ সালে। বাকি দুটিতেই বাংলাদেশের বিখ্যাত জয়। তবে এবার ‘রক্ষণশীল’ মেজাজের সেই ইংল্যান্ড দল আর নেই। বর্তমানে ক্রিকেটবিশ্বে সবচেয়ে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে তারা। শক্তির বিচারে তাই ঢের এগিয়ে ইয়ন মরগানরা। আগ্রাসী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের তরিকা তাই ‘রক্ষণশীল’ ক্রিকেট। মাশরাফি বলেছেন, তাদের বিপক্ষে রক্ষণই নাকি আসল আক্রমণ!

বাংলাদেশ দল : তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), মাহমুদুল্লাহ, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, মোসাদ্দেক হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান।

ইংল্যান্ড দল : ইয়োইন মরগান (অধিনায়ক), জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার, লিয়াম প্লানকেট, আদিল রশিদ, জো রুট, জেসন রয়, বেন স্টোকস, ক্রিস ওকস, মার্ক উড, জোফরা আর্চার।