একজন ছাত্রীকে মুখের নিকাব সরিয়ে কথা বলার অনুরোধের পরিণাম যে এমন হবে, সেটি কল্পনাও করতে পারেননি অধ্যাপক আজিজুর রহমান। তার জীবন এখন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। বাড়ির সামনে চব্বিশ ঘণ্টার পুলিশ পাহারা। ঢাবির এই অধ্যাপককে ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে হলে আগে থেকে পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে থানা থেকে যাতে করে তার নিরাপত্তার জন্য সঙ্গে পুলিশ দল দেয়া যায়।
‘আমাকে নিয়ে আমার পরিবার খুবই উদ্বেগের মধ্যে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সহকর্মীরাও উদ্বিগ্ন’ বলছিলেন অধ্যাপক আজিজুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ক্লাসে ২৬ এপ্রিল কী ঘটেছিল, তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রচারণা চলছে গত দুই সপ্তাহ ধরে। মোবাইলে ধারণ করা ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ ছেড়ে দেয়া হয়েছে ইউটিউবে এবং ফেসবুকে। এতে দাবি করা হচ্ছে, বোরকা পড়ার কারণে এক ছাত্রীকে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিলেন তিনি। বিভিন্ন পেজে শত শত বার শেয়ার করা হয়েছে এই ভিডিওটি। সেদিন আসলে কী ঘটেছিল ক্লাসে? অধ্যাপক আজিজুর জানান, তার পুরো ক্লাসে শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে একজনই ছিলেন বোরকা পড়া। তার চেহারা দেখা যাচ্ছিল না, শুধু চোখ জোড়া দেখা যাচ্ছিল।
তিনি বলেন, ‘ওকে চিনতে না পেরে আমি ওর আইডি কার্ড চেক করি এবং দেখতে পাই যে আইডি কার্ডের ছবিতে পুরো চেহারাই প্রদর্শিত আছে। তখন আমি তাকে বলেছিলাম, তুমি যে চেহারা দেখিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছো, সেই চেহারাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসতে হবে।’ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর কি তার পছন্দমত পোশাক পরার অধিকার নেই- এ প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক আজিজুর বলছেন, সেদিন ক্লাসে পোশাক-আশাক নিয়ে কোন কথাই হয়নি। তিনি বলেন, ‘বোরকা পড়া মেয়েটি ক্লাশে যখন কথা বলছিল তখন ওর কথা আমি পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছিলাম না। শুনতে না পারার কারণে তাকে আমি বলেছিলাম, তোমার মুখের কাপড় সরিয়ে যদি কথা বলো, তাহলে বুঝতে পারবো তুমি কী জিজ্ঞেস করছো।’
অধ্যাপক আজিজুর বলেন, ‘এটা বলা যদি অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে তা বলতে পারেন। কিন্তু এছাড়া হিজাব-নেকাব বা কী ধরণের পোশাক পড়ছে সেটা নিয়ে তো আমি কোন প্রশ্ন করিনি।’ এই ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় অধ্যাপক আজিজুরের বিরুদ্ধে যে ব্যাপক প্রচারণা শুরু হয়, তার পরিণামে তিনি নানা ধরনের হুমকি পেতে শুরু করেন। কিভাবে তাকে হত্যা করতে হবে তার নির্দেশনাও আছে অনলাইনে কোনো কোনো পোস্টে। এ নিয়ে তিনি গত সপ্তাহে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন থানায়। তবে এর মধ্যেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসা নেয়া বন্ধ করেননি। পুলিশ যদিও তাকে ক্যাম্পাসের বাইরে চলাচলের সময় সতর্ক থাকতে বলেছে।
অধ্যাপক আজিজুর বলেন, ‘ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে আমাকে ১০বার ভাবতে হয়। সেদিন গিয়েছিলাম, আগে থেকে পুলিশকে জানিয়ে। পুলিশ থেকে বলা হয়েছে আমি ক্যাম্পাসের বাইরে গেলে যেন তাদের জানিয়ে যাই।’
তিনি অবশ্য বলছেন, ক্রমাগত হুমকি সত্ত্বেও তিনি মোটেই ভীত নন। তিনি মনে করেন, তার বিরুদ্ধে এই ক্রমাগত মিথ্যে প্রচারণার পেছনে আছে জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। অধ্যাপক আজিজুর বলেন, ‘আমি ভীত নই একারণে যে, আমার বিরুদ্ধে যে অপ্রচার চালানো হচ্ছে, আমি তো আসলে তা করিনি। আমি তো ধর্ম নিয়ে বা মেয়েদের পোশাক-আশাক নিয়ে কোনো কথা বলিনি।’ সূত্র: বিবিবি বাংলা।
