যুবলীগ নেতাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী


ঢাকা: যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ের কাজ শুরু করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে বর্তমান নেতাদের পাশাপাশি ছাত্রলীগের সাবেক ৮০ জন নেতার ব্যাংক হিসাবের তথ্যসহ সার্বিক খোঁজ-খবর নিচ্ছেন তিনি।

জানা গেছে, নেতা নির্বাচনে এবার সততা, স্বচ্ছতা ও সাংগঠনিক দক্ষতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ কারণে নেতারা কে কত টাকার মালিক, অর্থের উত্স কী, কোনো অবৈধ টাকা আছে কি না—সবকিছু যাচাই করা হচ্ছে।

আগামী ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। সাধারণত কাউন্সিলররা নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষমতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর অর্পণ করে থাকেন। এ কারণে আগে থেকেই সম্ভাব্য নেতাদের বিষয়ে সাংগঠনিক ও গোয়েন্দা রিপোর্টের মাধ্যমে খবর নিচ্ছেন তিনি। ব্যাংক হিসাবের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, পূর্ব প্রস্তুতির মাধ্যমে সম্প্রতি কৃষক লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সিদ্ধান্তকে কৃষক লীগের কাউন্সিলররা স্বাগত জানিয়েছেন।

যুবলীগের নেতা নির্বাচনে ৫৫ বছরের বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এতে নেতৃত্ব হারাচ্ছেন বর্তমান যুবলীগের কেন্দ্রীয় দুই-তৃতীয়াংশ নেতাই। চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদকসহ যুবলীগের ২৯ প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে বাদ পড়ছেন ২৬ জন। আর মারা গেছেন এক জন। শুধু যুবলীগই নয়, বয়সসীমার ফাঁদে পড়ে অন্য সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও পদ হারাচ্ছেন কি না, এটা নিয়েও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

অতীতের মতো ‘বুড়ো লীগের’ পরিবর্তে এবার ‘তারুণ্য লীগ’ সৃষ্টির এ প্রয়াসে দীর্ঘদিন কোনো পদ না পাওয়া সাবেক ছাত্রনেতারা যেমন গা ঝাড়া দিয়ে মাঠে নেমেছেন, ঠিক তেমনি ৬০-৭০ বয়সি সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের শীর্ষ নেতারা নিশ্চিত পদ হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন সামনে রেখে বড়ো ধরনের শুদ্ধি অভিযানের আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতা জানান, পঁচাত্তর-পরবর্তী সময় থেকে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যারা বিভিন্ন সময়ে পদবঞ্চিত হয়েছেন, তাদের এবার অগ্রাধিকার দেবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে যারা রাজনীতিতে নেই, তারা অবশ্য এই তালিকায় নেই। শুধু দক্ষতা-যোগ্যতা ও ত্যাগ থাকার পরও যারা রাজনীতির মঞ্চে অবহেলিত ছিলেন, তাদের এবার আওয়ামী লীগে টানতে পারেন শেখ হাসিনা। এদের মধ্যে শীর্ষ পদে ছিলেন যারা, শুধু তারাই নয়, অন্যান্য পদের ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদেরও এবার সুযোগ করে দেবেন শেখ হাসিনা। বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয় সাবেক ছাত্রনেতারাও আসতে পারেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হয়ে। তবে অনুপ্রবেশকারী কেউ যাতে নতুন নেতৃত্বে আসতে না পারেন, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা হচ্ছে।

জানা গেছে, যুবলীগের চেয়ারম্যান বাদ পড়ায় সংগঠনের শীর্ষ দুই পদে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন বর্তমান কমিটির অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্যই। বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদও ছিলেন চেয়ারম্যান হওয়ার লড়াইয়ে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্প্রতি যুবলীগের বৈঠকে বয়সসীমা ৫৫ বছর নির্ধারিত করা হলে রীতিমতো পদপ্রত্যাশীদের মাথায় যেন বাজ পড়ে। অনেকেই আগামী জাতীয় কংগ্রেসে ঐ দুটি শীর্ষ পদে লড়াই করা তো দূরের কথা, পদপ্রত্যাশীই হতে পারবেন না। সাংগঠনিক জেলা, উপজেলা পর্যায়ের নেতাদেরও অধিকাংশের বয়স ৫৫ পেরিয়ে গেছে। আসন্ন সম্মেলনে যুবলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা হলেন ফজলুল হক আতিক, তাজউদ্দিন আহমেদ, বদিউল আলম, ফারুক হাসান তুহিনসহ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেওয়া একঝাঁক তরুণ সাবেক ছাত্রনেতা।

স্বচ্ছ ইমেজ ও আন্দোলন-সংগ্রামে ইতিপূর্বে নানা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও এসব সাবেক ছাত্রনেতার ক্ষমতাসীন দলটিতে শুধু উপকমিটির সহসম্পাদকের নামমাত্র এই পদ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। দলে বড়ো ধরনের শুদ্ধি অভিযান ও পরিবর্তনের হাওয়া উঠলে এসব সাবেক ছাত্রনেতা সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব পেতে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। প্রতিদিনই গণভবনসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এবং ধানমন্ডিতে দলের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় সাবেক ছাত্রনেতাদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠছে। নিজ নিজ অবদান বড়ো নেতাদের সামনে তুলে ধরে দলে মূল্যায়ন চাইছেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচনে বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া হয়। ঐ সময়েও হঠাৎ করে হাজারো নেতা বাদ পড়েন ছাত্রলীগ থেকে। গত ১৩ বছরেও যাদের অনেকেই পদ পাননি আওয়ামী লীগের অন্য কোনো সংগঠনে। তাই যুবলীগের বয়স বেঁধে দেওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে তারা এখন মাঠে।

সূত্র: ইত্তেফাক।