ভালোবাসা, ভালোলাগা এক নয়


অর্জুন কুমার নাথ : হায়রে ভালোবাসা। মাত্র নয় মাস আগে প্রেম করেই বিয়ে করেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মরত একটি সিমেন্ট কোম্পানির বিক্রয় ম্যানেজার অপূর্ব রায় ও সদ্য মাস্টার্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া দিপা রাণী দেবনাথ।

পরিবারের সম্মতি ছাড়াই ভালবাসার বন্ধনে হয়ছিল তাদের বিয়ে। কিন্তু এই ভালোবাসা শেষ হয়ে যেন পরিণত হল বিভীষিকায়। বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভালোবাসার স্ত্রী দিপার লাশ রেখে পালিয়ে গেলেন স্বামী অপূর্ব।

স্বামী, শ্বাশুড়ি ও ননদ প্রতিনিয়ত দিপাকে মানসিক নির্যাতন করে আসছিল অনেক দিন ধরে। অপূর্ব রায়ের সংসারের হর্তাকর্তা হলেন তার বোন মমি রায়। বোনের সিদ্ধান্ত ছাড়া এ সংসারে কিছুই হয় না।

সম্প্রতি দিপা প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গত ২৫ অক্টোবর ভাইভা পরীক্ষা দেন কিশোরগঞ্জ অষ্টগ্রাম উপজেলায়। এর আগে দিপা সন্তান সম্ভবা হওয়ার খবরে তার স্বামী, শ্বাশুড়ি ও ননদ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। অপূর্ব ও তার মায়ের সাফ কথা এখন বাচ্চা নেওয়া যাবে না। এই বাচ্চা লালন-পালন করার সময়-সুযোগ তাদের নেই। তাই ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে গর্ভপাত করাতে তারা দিপাকে চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু দিপা তার গর্ভের সন্তানের মা হওয়ার পক্ষে অনড় সিদ্ধান্তে থাকেন। ফলে তার ওপর শুরু হয় নানা ধরনের নির্যাতন।

বুধবার রাতে দিপার মাতা বাঙ্গালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জয়ন্তী রাণী দেবী সাংবাদিকদের কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, কিছুদিন আগে আমার মেয়ে ফোন করে বলে ‘মা ওদের কারণে আমি গর্ভের সন্তানের মা হতে পারছিনা। ওরা ক্লিনিকে নিয়ে আমার গর্ভপাত করাতে চায়। এভাবে গর্ভপাত করালে ভবিষ্যতে আমি আর সন্তানের মা না-ও হতে পারি। ক্লিনিকে যেতে আমি রাজি না হওয়ায় ওরা আমার গলা টিপে মেরে ফেলতে চায়।’

প্রতিদিন এ রকম হাজারো ঘটনা ঘটছে আমাদের সমাজে, আমাদের ঘরে। কেউ মুখ ফুটে বলছে, আর কেউ মুখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছে। আর শেষে গিয়ে কেউ হারাচ্ছে তাদের মেয়ে, আবার কেউ হারাচ্ছে কারোর মা।

তাই আমি বলি এ সম্পর্ক ছিল কি তাদের ভালোবাসার, নাকি ভালোলাগার!

লেখক: সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ গীতা শিক্ষা কমিটি (বাগীশিক)।