শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইমরুল কায়েসকে লিগ্যাল নোটিশ কউকের, ফেইসবুকে নিন্দার ঝড়

প্রকাশিতঃ ২৭ জানুয়ারী ২০২০ | ১২:৫৬ অপরাহ্ন


কক্সবাজার: চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়া কক্সবাজারের সড়ক সংস্কার ইস্যুতে ফেইসবুকে লিখে সুনাম ক্ষুণ্ণের অভিযোগে সাংবাদিক ইমরুল কায়েসকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) দেয়া লিগ্যাল নোটিশের নিন্দার ঝড় উঠেছে সেই ফেইসবুকেই।

যমুনা টেলিভিশনের কক্সবাজার প্রতিনিধি ইমরুল কায়েসের প্রতি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এ ধরনের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বহু ফেইসবুক ব্যবহারকারী। সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান-সচিব।

ইমরুল কায়েসের পক্ষে যারা ফেইসবুকে সরব হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই কক্সবাজারের বাসিন্দা। তারা ভাঙা সড়ক সংস্কারের দাবিতেও সোচ্চার। দীর্ঘদিন সড়ক সংস্কার না করায় কক্সবাজারবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিয়েছেন অনেক ফেইসবুক ব্যবহারকারী।

এর আগে পর্যটন শহর কক্সবাজারের বিধ্বস্ত প্রধান সড়ক সংস্কার করার জন্য আন্দোলনে নামে কক্সবাজারের সর্বস্তরের মানুষ। এ নিয়ে গত ১৩ জানুয়ারী কক্সবাজার প্রেসক্লাবে একটি নাগরিক সভাও অনুষ্ঠিত হয়। কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহেরের সভাপতিত্বে উক্ত নাগরিক সভা সঞ্চালনা করেন সড়ক সংস্কার আন্দোলনের নেতা ইমরুল কায়েস। এ ছাড়া সড়ক সংস্কারের দাবিতে ফেইসবুকেও সরব ছিলেন তিনি।

২৩ জানুয়ারি ফেইসবুকে সাংবাদিক ইমরুল কায়েস লিখেছেন, ‘প্রিয় কক্সবাজারবাসী, সড়ক সংস্কারের আন্দোলন করায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চাইতে আলটিমেটাম দিয়েছে। ক্ষমা কার চাইতে হবে?’

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পক্ষে আইনজীবী এস এম শহীদুজ্জামান স্বাক্ষরিত লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, সড়ক সংস্কার নিয়ে ফেইসবুকে লেখার জন্য ইমরুল কায়েসেকে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিকট ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা না চাইলে তার বিরুদ্ধে ২০ কোটি টাকার মানহানি মামলা ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করা হবে।

উক্ত নোটিশের কপির ছবি তুলে ২৫ জানুয়ারি ফেইসবুকে পোস্ট করে ইমরুল কায়েস লিখেছেন, ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে মামলাটা কখন করে সেই অপেক্ষায় আছি। আমার অধিকার আদায়ে আপনার এই মামলা আমাকে আরো অনুপ্রাণিত করবে। আমার কন্ঠ রোধ করতে হলে আমাকে হত্যা করতে হবে।’

উক্ত স্ট্যাটাসে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ২০৩টি কমেন্ট পড়েছে। সাহেদ আরমান লিখেছেন, ‘কোন বেকুবের বুদ্ধিতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এমন একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিল! কউক এর প্রতি মানুষের একটি খারাপ দৃষ্টি সৃষ্টি হল।’

রুবায়ছুর রহমান নামের একজন মন্তব্য করেছেন ‘এই কক্সবাজার আমার, আপনার, সকলের, কক্সবাজার উন্নয়ন নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলবে আর এটা সবার চোখ বুঝে সহ্য করতে হবে? এটা কখনো হবেনা। কারো না কারো প্রতিবাদী হয়ে এগিয়ে আসতে হবে, আর এলাকার উন্নয়ন নিয়ে প্রতিবাদ করাটা যদি অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে আমরা মগেরমুল্লুকে বাস করছি। ইমরুল কায়েস ভাই আপনি কখনো মাফ চাইবেননা। আপনার সাথে কক্সবাজারের সর্বস্তরের জনগণ আছে। প্রয়োজনে ৫০ হাজার মামলা করুক, প্রতিবাদের কন্ঠস্বর কখনো থামানো যাবেনা।’

শেফায়েত মোস্তফা নামের একজন লিখেছেন, ‘এদের কি লজ্জা শরম বলতে কিছুই নাই… সত্যিটা যখন কেউ সাহস করে প্রতিবাদ করল উনাদের গায়ে জ্বালা-পোড়া শুরু হয়ে গেছে। কথায় আছে হক কথায় ঠক বেজার.. গরম ভাতে বিলাই বেজার।’

জসিম উদ্দিন টিপু মন্তব্য করেন, “ফেইসবুকে জনকল্যাণকর স্ট্যাটাস দেওয়ায় ইমরুল কায়েস বরাবর লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। বিষয়টি কেন জানি বিভ্রান্তিকর! সড়ক এবং জনসমস্যা সংক্রান্ত অন্যান্য ইস্যু নিয়ে স্ট্যাটাস দিলে দোষের কি আছে? সাংবাদিক ইমরুল কায়েস নোটিশের প্রত্যুত্তরে ইতিমধ্যে অপর একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। এবার কউক কি করবেন? জনপক্ষে স্ট্যাটাস দেখে সমস্যার সমাধান না করে, উল্টো মানহানি-টানহানি হয়েছে মর্মে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো কিসের ইঙ্গিত? এটি দায়িত্বহীন আচরণের শামিল। তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি ‘

এম সাইফুল ইসলাম সোহেল মন্তব্য করেন, ‘সত্যের জন্য বিশ কোটি টাকা কক্সবাজারবাসী ভালোবেসে যোগাড় করবে আপনার (যদি আল্লাহ আপনাকে এর চাইতে অনেক অনেক বেশি দিয়েছে) জন্য, তবু মাথা নোয়াবার নই!’

শরিফ উদ্দিন নামের একজন লিখেছেন ‘বাহ, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এমন হীন মন মানসিকতার নিন্দা জানাই।
ভাই আপনার কাছে ক্ষমা চাইবে। আপনার সাথে কক্সবাজারের জনগণ আছে।’

নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘তারা মনে করেছে যে, মামলা দিয়ে ইমরুলকে দমানো যাবে, তাহলে এটা হবে তাদের ভুল ধারণা, এগিয়ে যাও ইমরুল কক্সবাজারবাসী তোমার সাথে আছে।’

শহিদুল আলম নামের একজন লিখেছেন, ‘জনগণের ঠেলা কঠিন। সাধারণ আমজনতার মনে তিলে তিলে জমাট হওয়া আগুন নিয়ে খেলা করলে শেষ হবে ছাই হয়ে। সচিব জনগণের টাকায় চাকরী করে তাই জনগণের অসুবিধা, কষ্ট লাগবের জন্যই কাজে মনোনিবেশ হওয়া উচিত। জনগণের কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়া উচিত। মনে রাখবেন এক ইমরুল থেকে লক্ষ ইমরুল সৃষ্টি হবে। জনগণের ঠেলা সাংঘাতিক কঠিন। ইতিহাস সাক্ষী।’

নাজমুল আলম নামের আরেক জন মন্তব্য করেছেন, ‘সরকারী প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করলে জনগণ প্রতিবাদ করবে এটা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। জনগণের পক্ষে কথা বলার জন্য আমরা কক্সবাজারের জনগণ ইমরুল কায়েসের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ।’

মো. সাহেদ লিখেন, ‘..মনে হয় উন্নয়নের জন্য বাজেটকৃত টাকা নিজেদের উন্নয়নে শেষ করে ফেলেছে সে জন্য ২০ কো‌টি টাকার মানহা‌নি মামলা করে সে টাকা দিয়ে উন্নয়নের কাজ শেষ কর‌তে চায়! সাথে আ‌ছি সব সময় আপনার সাথে মামলার আসামী হতে চাই। তবু তাদের সাথে সমঝোতা নাই।’

রফিকুল ইসলাম মানিক লিখেছেন, ‘এই নোটিশটি বিভিন্ন পত্রিকায় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হউক। জেলাবাসী জানুক। একজনের প্রতিবাদে কউক কত ভীতু। আরে কউক ইমরুল জনগণের জন্য প্রতিবাদ করছে তোদের মত ভুইংগারা সেটা বুঝবে না। সবাইকে নিয়ে কউকের চেয়ারম্যান/সচিবকে অপসারণের জন্য আন্দোলন করা হউক। যাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যমুনা টেলিভিশনের কক্সবাজার প্রতিনিধি ইমরুল কায়েস একুশে পত্রিকাকে বলেন, কারো বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত দ্বন্ধ থেকে কিছু তো করিনি। কউকের মানহানি হয় এমন কিছুও করিনি। জনদুর্ভোগ নিয়ে সরব ছিলাম। কউক কর্তৃপক্ষ কক্সবাজারবাসীর কন্ঠরোধ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল একুশে পত্রিকাকে বলেন, বর্তমান সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। সেখানে একজন নাগরিক হিসেবে বা সংবাদকর্মী হিসেবে ইমরুল কায়েস তার বক্তব্য তুলে ধরতে পারে। লিগ্যাল নোটিশটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় একটি প্রতিবন্ধকতা। মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী সরকারের কর্মপ্রয়াসের সঙ্গে কউকের লিগ্যাল নোটিশ প্রদানের বিষয়টি সাংঘর্ষিক। আমরা কক্সবাজারের সাংবাদিক সমাজ বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করে কী করা যায় সেটা সিদ্ধান্ত নেব।