চেতনায় তিন ফুল : একুশে-একাত্তর-স্বাধীনতা

বোরহান মেহেদী, নরসিংদী :  আহা কতো যে ফুল, চিত্ত আমার অশান্ত- আকুল। ফুলে ফুলে ঢেকে আছে বিনম্র মিনার, শ্রদ্ধাঞ্জলিতে প্রার্থণা অপার। রাত গভীরতা ভেঙে খান খান, নগ্ন পায় নিঃশব্দ ডেকেছে বান। নিস্তব্ধতার ছাঁয়ায় উড়ে শোক আকুতি, শহীদের রক্তে ফুটেছে  স্বাধীনতা বাতি। বছর পেরিয়ে আজ ব্যথা ভার জ্বলে, মাতৃভাষার জন্য ত্যাগের করতলে।
ত্যাগের মহিমায় উদ্বেলিত শহীদের বুকের তাঁজা রক্তে আমরা ফিরে পেয়েছি মহান ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ বা অন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ দিবসটি গোটা বাঙালির স্বাধীনতা প্রাপ্তির সোপান। চেতনায় লালন করা একটি জাতির অসীম শক্তির দাবানল। যা ১৯৭১ সালের ৩০ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা ভাই-বোনদের খুনের বিনিময় পাওয়া একটি পতাকা, একটি মানচিত্র, একটি অধিকারের নাম বাংলাদেশ। ’৫২ এর ভাষা শহীদদের শহীদী রক্তের শপথ নিয়েই বাঙালিরা এ বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলো। তাই এইদিনটিকে আমরা ফুলের পবিত্রতায় নিজেদেরকে মিশিয়ে ফেলতে চাই,  শহীদদের অমলিন আত্মস্পর্শে। যেমনি শোকের তেমনি গর্ববোধ সুখ আনন্দের। এটাই ভাষাসৈনিকদের প্রতি আমাদের হৃদয় নিংড়ানো বিস্মিত প্রতিদান।
২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবসটি আমাদের কাছে অনন্য মর্যাদার দিন। বাংলার আপামর মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন। এদিনটিকে ঘিরে ফুল সংগ্রহ করা, শহীদ মিনারকে আলপনায় সাঁঝানো। এসব বড় আবেগের বিষয়। বড় উৎসুক উদ্দীপনার জায়গা। যা অনুভবে জেগে থাকে সারা বছর, সারা মাস, যুগ যুগ ধরে। ইতিহাস আর ঐতিহ্য একথা বলে কানে কানে আমার-আপনার সকলের মর্মে ছুঁয়ে থেকে। আমরা এই রক্তে পাওয়া দেশ মাতৃকার বুকের দুগ্ধডোবা সুখ কিছুতেই জীবন অস্তিত্বে ভুলতে পারি না। কারণ, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সবই একসুত্রে গাথা।
আমাদের এইদিনটি আত্মবিমলতার স্পর্ধিত মহাসুমদ্র মোহনা। এতে আমরা মিলিত হই, তারপর নিজস্ব প্রাণের ভাবধারাতে হারিয়ে যাই। খুঁজে ফিরি অধিকারের আত্মসুখ। এই সুখের ছবি আরো উদ্ভাসিত হয়ে উঠে যখন ২১ এর প্রথম প্রহরে গোলাপের পাপড়ি প্লাবনে নুয়ে পড়ে প্রাণের মিনার। রঙ-বেরঙের ফুলের স্পর্শে ডুবে থাকা মিনার যেন বলে উঠে সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধের দেশ বাংলাদেশ। ফুল এনেছে ৫২। শহীদ বেদীর ফুল দিয়েছে মুক্তির ৭১। ফুল স্বাধীকারের ভালোবাসা। এই ফুল শিখিয়েছে কিছুতেই মাথা নোয়াবার নয়। তাই তো রক্তবর্ণের ফলগুধারায় চিরদিন উদ্দীপিত এক শক্তির নাম বাঙালি।