ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া : করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ইতালি যা ভুল করেছে, আমরা যেন ভুলেও তা না করি। ইতালিতে ১ মাস আগে ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখে রোগী ছিল ৮ জন। আজ ২২ মার্চ ইতালির রোগী ৫৩ হাজার ৫৭৮ জন। শুধু আজকেই মারা গেছেন ৭৯৩ জন। মোট মারা গেছেন ৪ হাজার ৮২৫ জন।
আরেকটি উদাহরণ স্পেনে ১ মাস আগে ২১ ফেব্রুয়ারী তারিখে রোগী ছিল ০ (শূন্য) জন। আজ মার্চের ২২ তারিখ স্পেনের রোগী ২৫ হাজার ৪৯৬ জন। শুধু আজকেই মারা গেছেন ২৮৫ জন। মোট মারা গেছেন ১ হাজার ৩৭৮ জন।
প্রশ্ন হচ্ছে ১ মাস পরে বাংলাদেশে কতজন? আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন ইতালির অবস্থা খুব খারাপ। কবর দেওয়ার লোক পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল ইতালিতে একদিনে আটশোর কাছাকাছি লোক মারা গেছে। ইরানে গণকবর খোঁড়া হচ্ছে। যতদিন চীনে এরকম হচ্ছিল, খবর পাচ্ছিলাম উহান প্রদেশ উজাড় হয়ে যাচ্ছে ততদিন আমরা সবাই সারাবিশ্ব বসে সমবেদনা জানানো ছাড়া আর কিছুই করিনি। তাই আজ ইউরোপসহ সারাবিশ্বের এই অবস্থা। মাত্র একমাসের ব্যবধানে। এখন আমাদের দরজার দাঁড়িয়ে আছে মরণ রোগ। মানুষ বিষাক্ত, বাতাস বিষাক্ত, হয়তো বা শরীরও বিষাক্ত হয়ে গেছে এতক্ষণে। জানতে না দিয়েই।
না, আতঙ্ক ছাড়ানোর জন্য লিখছি না। ইতালি যে ভুল করেছিল আমরা সে ভুল যেন না করি। শুধু টিভি বা খবরের দর্শক হয়ে নয়, কিছু করার আবেদন এটা। হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকের ভুয়া খবর নয়, বরং সচেতনতা ছড়ান। পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশ সহ এই উপমহাদেশে মাত্র দুই সপ্তাহ যদি আমরা ঘরবন্দি হয়ে থাকি তাহলে আমাদের অবস্থা ইতালি বা ফ্রান্সের মত হবে না।
ইতালি, ইরান, ফ্রান্স অনেক দেরিতে করেছে, আমাদের হাতে এখনো কিছুটা সময় আছে। দুই সপ্তাহ ঘুরে বেড়ানো বা অপ্রয়োজনীয় কাজগুলোকে মুলতবি রাখুন। একসপ্তাহ ছুটি কাটান ঘরে বসে, অযথা দোকান বাজার ছোটাছুটি করে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না। এই এক দু সপ্তাহ খুব গুরুত্বপূর্ণ। দুসপ্তাহ পর হয়ত সেলফ কোয়ারেন্টাইনের আর কোনো প্রয়োজনীয়তাই থাকবে না। প্রকোপ একেবারে কমে যেতে পারে, নইলে হয়ত ঘরে বসে বসেও আক্রান্ত হতে পারেন।
আসুন, আমরা আগামী দু-সপ্তাহ মাত্র তিনটা কাজ করি। বেশি না, তিনটা কাজ-
# এক, বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দিই। বন্ধ মানে বন্ধ। পাড়ার দোকানটুকুও নয়। আত্মীয়, বন্ধু, প্রতিবেশী কারোর বাড়ি যাবেন না, তাদেরও নিজের বাড়িতে ডাকবেন না। যেখানে ভিড় বেশি, কুড়িজনের বেশি লোক জমায়েত হয়েছে সে জায়গা এড়িয়ে চলুন, সে শপিং মল হোক কি ধর্মীয় স্থান। দু’সপ্তাহ সেদ্ধ ভাত খেয়েই চালিয়ে নিই। চাল-ডাল-আলু-পেঁয়াজ মজুত আছে এতদিনে। বিরিয়ানি মশলা কিনতে না বেরোনোর প্রতিজ্ঞা করি।
# দুই, সাধারণ হাইজিন মেনে চলি। খাবার আগে এবং ঘন্টায় অন্তত একবার করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলি। নাকে-মুখে হাত যথাসম্ভব কম দিই।
# তিন, “আমি একা কি করব? সবাই তো মানছে না” – এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন। আপনার মাধ্যমে যদি একজনও ক্ষতিগ্রস্থ হয় সে হল আপনার প্রিয়জন। বাবা-মা-স্বামী-স্ত্রী-সন্তান। যার সঙ্গে আপনি দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছেন তাকে আপনিই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন না তো? বয়স্ক মানুষ ছাড়াও যাদের হাইপ্রেসার, সুগার, হার্টের অসুখ, কিডনি, ক্যান্সার বা অন্য কোনো সাধারণ ক্রনিক রোগ আছে, করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এলে তাঁদেরও মৃত্যুর হার কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
তিনটা বিষয়, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বাইরে না বেরোনো। কতদিন না বেরিয়ে সম্ভব? ঠিক দু-সপ্তাহ। আপনি হয়ত স্ট্রং, সাধারণ ফ্লুয়ের উপসর্গও নেই। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও আপনি ঠিক সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু ১৪ দিনের মধ্যে আপনি যদি কোন অন্য মানুষের সংস্পর্শে আসেন তাহলে তাঁর জীবন বিপন্ন হতে পারে। এটা ভেবে শিক্ষিত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ যদি এটুকু মেনে চলেন তাহলেই আমরা নিরাপদ থাকবো।
আসুন দেখিয়ে দিই, উন্নত বিশ্বও যেটা পারেনি, আমাদের গরীব দেশ সেটা করে দেখিয়েছে।
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেযজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি)