রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস আজ, বাংলাদেশেই আক্রান্ত ১০ হাজার মানুষ

প্রকাশিতঃ ১৭ এপ্রিল ২০২০ | ৭:৩৪ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম : বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস আজ (১৭ এপ্রিল)। ১৯৮৯ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। আর তাতে সবাইকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই বারের স্লোগান হচ্ছে ‘গেট প্লাস ইনভল্ব’।

প্রাচীনতম দুরারোগ্য মরণব্যাধিগুলোর মধ্যে একটি বংশাণুক্রমিক রক্তক্ষরণজনিত রোগের নাম হিমোফিলিয়া। মূলত রক্তে জমাট বাঁধার উপাদান বা ফ্যাক্টর জন্মগতভাবে কম থাকার কারণে এ রোগটি হয়ে থাকে।

এই রোগ সম্পর্কে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের হেমাটলজিস্ট বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. মো: গোলাম রাব্বানি বলেন, রক্তজমাট বাঁধার জন্য আমাদের শরীরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, যাদেরকে বলা হয় ‘ক্লটিং ফ্যাক্টর’। আর এই ক্লটিং ফ্যাক্টরের অভাবেই রোগী আক্রান্ত হয় হিমোফিলিয়া রোগে।

সাধারণত ক্লটিং ফ্যাক্টর-৮ এবং ক্লটিং ফ্যাক্টর-৯ এর অভাবে হিমোফিলিয়া দেখা দেয়। যেহেতু এটি একটি বংশগত রোগ তাই এক্স ক্রোমোজোম এর ত্রুটির কারণে এই উপাদান দুটি শরীরে তৈরি হয় না। জন্মগতভাবে প্রাপ্ত এই রোগটি এক্স ক্রোমোজোম দ্বারা বংশপরম্পরায় বাহিত হয় বলে শুধুমাত্র পুরুষেরাই এই রোগে আক্রান্ত হয়। মহিলারা এই রোগের ক্রোমোজোমের ত্রুটি বহন করলেও এতে আক্রান্ত হয় না। তারা শুধুমাত্র বাহক হিসেবে কাজ করে।

হিমোফিলিয়া দুই ধরনের হয়ে থাকে। হিমোফিলিয়া-এ এবং হিমোফিলিয়া-বি। চিকিৎসকদের মতে, ৮৫ শতাংশ রোগীর হিমোফেলিয়া-এ এবং ১৫ শতাংশ রোগীর হিমোফেলিয়া-বি তে আক্রান্ত হয়। রক্তজমাট বাঁধা জনিত বিশৃঙ্খলায় সবচেয়ে পরিচিত হল হিমোফেলিয়া-‘এ’, দশ হাজার শিশুর মাঝে অন্তত একটি শিশু জন্মের সময় এ রোগে আক্রান্ত হয়। অপরদিকে হিমোফেলিয়া-‘বি’তে জন্মের সময় আক্রান্ত হতে পারে ৩৪ হাজার শিশুর মাঝে একজন।

হিমোফেলিয়ার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমেরিকায় প্রতি ১০ হাজার মানুষের মধ্যে গড়ে অন্তত একজন হিমোফেলিয়া-‘এ’ রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে এ রোগের কোনো গবেষণা ও সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও চিকিৎসকদের ধারণা, দেশে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার মানুষ হিমোফেলিয়াতে আক্রান্ত।

নোভার্টিজ ফাউন্ডেশনের কনসালট্যান্ট ড. জেফরি কোহেন এর আর্টিকেলে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী প্রায় চার লাখ মানুষ হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত।

হিমোফিলিয়া রোগ এখন পর্যন্ত অনিরাময়যোগ্য একটি রোগ। তবে আক্রান্তের প্রথম দায়িত্বই হচ্ছে সচেতনতার সাথে চলাফেরা করা, যেন কোনোরূপ আঘাতে রক্তক্ষরণ না ঘটে। এ রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধে প্রধানত ব্যবস্থা হচ্ছে রক্তসঞ্চালন। রক্ত থেকে তৈরি ‘ফ্রেস ফ্রোজেন প্লাজমা’ নামক উপাদানই কেবল এ রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সক্ষম।

কিন্তু এ ফ্রেস ফ্রোজেন প্লাজমা ছাড়াও হিমোফিলিয়া রোগীর প্রয়োজন ফাক্টর এইট/নাইন ইনজেকশন যা খুবই ব্যয়বহুল। দরিদ্র অসহায় রোগীদের ক্ষেত্রে তা সংগ্রহ দু:সাধ্য ব্যাপার।

আর এসব বিষয় চিন্তা করে দেশে গড়ে উঠেছে হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ। উক্ত সংগঠন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব হিমোফিলিয়া থেকে বিভিন্ন সময় দরিদ্র অসহায় রোগীদের জন্য এই সব ইনজেকশন প্রদান করা হয়। যার জন্য হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে বরাবর।

এই নিয়ে হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশের চট্টগ্রাম চাপ্টারের সভাপতি মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব হিমোফেলিয়া থেকে এই পর্যন্ত হিমোফেলিয়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের রোগীদের জন্য ৬ কিস্তিতে প্রায় ৬ কোটি টাকার ইনজেকশন সহায়তা পেয়েছি। এছাড়া উক্ত সংগঠনের তদবিরসহ দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের রোগীদের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এই প্রথম ৩৫ লক্ষ টাকার সরকারিভাবে বিনামূল্যে ফ্যাক্টর ইনজেকশন বরাদ্দ পেয়েছি যা বেশ উল্লেখ্যযোগ্য।

আশা করছি পরবর্তী বছরগুলোতেও এই ধারা অব্যাহত থাকব। ভবিষ্যতেও এভাবে হিমোফেলিয়া রোগীদের পাশে থাকব। – বলেন সাইফুল ইসলাম।