বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : বাঁশখালীতে চৌকিদারের টিপসই নিয়ে ত্রাণ আত্নসাতের অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের নাম মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকা। তিনি উপজেলার সাধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
ভুক্তভোগীর পক্ষে এ ঘটনার প্রতিকার ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন ও বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সাধনপুরের ৪ ব্যক্তি।
তারা হলেন – মৃত আফজল আহমের পুত্র মো. ওসমান গনি, ফেরদৌস আহমদের পুত্র মঞ্জুরুল আলম, মৃত সোলতান আহমদের পুত্র মো. সৈয়দ, মৃত আবুল কাশেমের পুত্র আবদুর রহমান।
সোমবার (২৭ এপ্রিল) তারা এ অভিযোগ প্রদান করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মহামারি করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত সাধনপুরের ৩০জন শ্রমজীবীর নাম মাস্টার রোলে থাকা সত্ত্বেও ত্রাণ সামগ্রী পাননি। সম্প্রতি ষষ্ঠ পর্যায়ে বিতরণকৃত ত্রাণের মাস্টার রোলের তালিকায় ৩০ জনের নাম লিপিবদ্ধ আছে; এমনটি জানার পর গত ২৪ এপ্রিল সাধনপুর ইউপি কার্যালয়ে ভুক্তভোগীরা ত্রাণের জন্য গেলে পরে যোগাযোগ করতে বলেন চেয়ারম্যান খোকা।
পরবর্তীতে গত ২৬ এপ্রিল ওই ৩০ ভুক্তভোগী পুনরায় ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করেন। তখন চেয়ারম্যান ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে আর পরিষদে না আসার জন্য আঙ্গুল উঁচিয়ে হুমকি প্রদান করেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, তারা খবর নিয়ে অবগত হন চেয়ারম্যান খোকা ও ত্রাণ বিতরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসারের যৌথ স্বাক্ষরে কয়েকদিন আগে ত্রাণ বিলি দেখিয়ে ইউএনও’র কাছে মাস্টাররোল জমা দেন। জমা দেওয়া মাস্টাররোলে ৩০ জনের স্বাক্ষর দেখিয়ে চৌকিদারের টিপসই দিয়ে ত্রাণ আত্নসাৎ করেন চেয়ারম্যান।
শুধু তাই নয়, ত্রাণ আত্নসাৎ করতে চেয়ারম্যান খোকা ৩০ জন ভুক্তভোগীর স্থায়ী ওয়ার্ড পরিবর্তন করে তার নিজের ওয়ার্ড দেখিয়েছেন বলেও জানান অভিযোগকারীরা।
ভুক্তভোগীরা আরো জানান, জেলা প্রশাসক এবং ইউএনও’র কাছে অভিযোগ করার পর চেয়ারম্যান খোকা তাদেরকে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। জোরপূর্বক ত্রাণ পেয়েছেন মর্মে স্বাক্ষর আদায়ের চেষ্টাও করে যাচ্ছেন চেয়ারম্যান। এই পরিস্থিতিতে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে জানার জন্য বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোমেনা আক্তারের ফোন নাম্বারে মঙ্গলবার রাতে ভিন্ন ভিন্ন নাম্বার থেকে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবার রিং পড়ে, কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, কই ইউএনও তো বিষয়টি আমাকে জানায়নি! আমি আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম।
তিনি বলেন, ৩০ জন শ্রমজীবীর যে ত্রাণ চেয়ারম্যান আত্মসাত করেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে সেই ত্রাণের দাম বড়জোর ১৫ হাজার টাকা। ১৫ হাজার টাকার লোভ যদি একজন চেয়ারম্যান সংবরণ করতে না পারেন তাহলে সেটি হবে দুঃখজনক। তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সাধনপুর ইউনিয়নের অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকা একুশে পত্রিকাকে বলেন, ’স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ত্রাণ আত্নসাত করার প্রশ্নই আসে না। সালাউদ্দিন কামাল নামে এক ব্যক্তি আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয়পতিপন্ন করার জন্য কুৎসা রটাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমি মোট ৫৬০ জনকে ত্রাণ দিয়েছি। সালাউদ্দিন কামাল উপজেলা পরিষদ থেকে ৩০টি কার্ড বরাদ্দ পায়। আমার আন্ডারে ৫৩০জন আর সালাউদ্দিনের ৩০জনসহ মোট ৫৬০ জনকে ত্রাণ বুঝিয়ে দিয়েছি।’