করোনা-যুদ্ধে ওরা তিন ভাই!

চট্টগ্রাম : মোস্তফা নুর বিপ্লব (৩০), সাজিদ কবির সাজি (২২) ও স্বাধীন (২২)-ওরা তিন ভ্রাতা, আপন খালাতভাই। তিনজন তিন বোনের একমাত্র সন্তান। তারা সবাই পরিবার-পরিজন ছেড়ে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। জীবনের ঝুঁকি জেনে, মেনে এখানে যুক্ত হয়েছেন ‘বন্ড সাইন’ দিয়ে।

এর মধ্যে বিপ্লব বিয়ে করেছেন মাত্র তিন মাস আগে, তিন মাসের নববধূকে ঘরে রেখে যোগ দিলেন করোনা যুদ্ধে, আত্মনিয়োগ করলেন করোনা রোগীদের সেবায়।

স্বাধীন ভালোবেসে বিয়ে করেছেন ছয়মাস আগে, স্ত্রীকে রেখে তিনিও যুক্ত হয়েছেন করোনা যুদ্ধের মিছিলে।

আর চীনের ন্যানচাং ইউনিভার্সিটিতে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর শিক্ষার্থী সাজিদ কবির করোনা-সংকটে চীন থেকে ফিরেই যোগ দেন চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে।

বিপ্লব বড়বোন আলেয়া বেগমের ছেলে, সাজি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কমিশনার রেহানা বেগম রানুর ছেলে, আর স্বাধীন তাদের ছোটবোন শাহীন বেগমের ছেলে।

চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবার পাশাপাশি বাথরুম পরিস্কার, রান্না্বান্না, কাপড় কাঁচা, গোসল দেয়া থেকে শুরু করে সবধরনের কাজই করছেন ওরা তিনভাই। করছেন অন্য করোনাযোদ্ধারাও।

বিপন্ন মানবতার সেবায় এগিয়ে আসা সাজিদ কবির সাজি একুশে পত্রিকাকে বলেন, করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সারা বিশ্ব। প্রায় সব দেশেই দেখা দিয়েছে ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট। বিশ্বজুড়ে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যুর ঘটনাও আর নতুন নয়। এই পরিস্থিতিতেও মানবিক সাহস নিয়ে এগিয়ে আসা প্রতিটি মানুষের প্রতি আমার অসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। এই যুদ্ধে তাদেরই একজন হয়ে মানুষের সেবায় কাজ করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।

স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকে সব প্রস্তুতি নিয়ে বাড়ি ছাড়ার আগ পর্যন্ত অসংখ্য সুন্দর গল্প জমা হয়েছে বলে জানান চীনের ন্যানচাং ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া সাজি।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে আমার কর্মস্থল, সব জায়গায় পেয়েছি আশাতীত সহযোগিতা। সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আবার কবে বাড়ি ফিরবো বা আদৌ ফিরবো কিনা জানি না। তবে গল্পগুলো জমা থাকলো, আরও যত নতুন গল্প সব জমা থাকবে। যদি জয়ী হয়ে ফিরি, গল্পগুলো আপনাদের শোনাব, জমা থাকবে ভবিষ্যৎ নাতি-পুতিদের জন্য।

নগরের আগ্রাবাদ দাইয়াপাড়া এলাকার তরুণ মোস্তফা নুর বিপ্লব বলেন, দেশ-সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই করোনা রোগীদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করছি। যতদিন এই জীবন থাকবে, সামর্থ্য থাকবে, মানুষের পাশে দাঁড়াব। এটাই আমার একমাত্র ব্রত।

এর আগে জলাবদ্ধতায় আটকে পড়া আগ্রাবাদ এলাকার শ্রমজীবী মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া, শহরের রেলস্টেশনে, ফুটপাথে শীতে কাবু অশীতিপর বৃদ্ধদের শরীরে গরম কাপড় জড়ানোসহ বিভিন্ন মানবিক কাজে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছেন বিপ্লব।

আর ‘সামহোয়্যার ইন আর্থ’ নামক একটি সংগঠনের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ আন্দোলনে সক্রিয় সাজিদ কবির সাজি।চীন থেকে ফিরে গত ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও সেন্টমার্টিনে দিনের পর দিন পরিচ্ছন্নতা-কার্যক্রম চালিয়েছেন সাজিসহ ৬ তরুণ।

দেশে করোনা-সংক্রমণ শুরু হলে হাতখরচ-পকেটখরচ বাঁচিয়ে এবং পুরোনো জমানো টাকায় হাজার হাজার মানুষকে মাস্ক, হ্যান্ড সেনিটাইজার বিতরণ ছাড়াও অগণন মানুষকে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন সাজিদ কবির সাজি ও তার সহপাঠীরা। আর এসব করেছেন পরিবেশ ও মানবিক সংগঠন ‘সামহোয়্যার ইন আর্থ’-এর ব্যানারে।