শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর প্রার্থী ঘোষণা আনোয়ারাকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাবে?

প্রকাশিতঃ ৪ মে ২০২৪ | ১০:২৫ পূর্বাহ্ন

জিন্নাত আয়ুব : নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে মনোনয়ন দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। যার কারণে এই নির্বাচনে কাউকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না।

এমন অবস্থায় আনোয়ারা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা ও কর্ণফুলী) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। গত ১ মে সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের সার্সন রোডের বাসায় আয়োজিত উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তিনি এই নাম ঘোষণা করেন।

আনোয়ারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নান চৌধুরী এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুগ্রীব মজুমদারের নাম ঘোষণা করেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তিনি সভায় বলেন, ‘আপনারা দুই প্রার্থীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন।’

উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত থাকার পরও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের উপস্থিতিতে দলীয়ভাবে প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে এম এ মান্নান চৌধুরীর পাশাপাশি বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তৌহিদুল হক চৌধুরী, সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ সাবেরও মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।

অন্যদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুগ্রীব মজুমদারের পাশাপাশি উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু জাফর, উপজেলা যুবলীগের সাবেক শিক্ষা ও পাঠাগার সম্পাদক সালাউদ্দিন সারো, যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবদুল মান্নান মান্নাও মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।

দলের বর্ধিত সভায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজনের নাম ঘোষণা করার পর তৃণমূলের বিভেদ প্রকাশ্যে এসেছে। সংঘাতের শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে চাতরী চৌমুহনী বাজারের ওয়ান মাবিয়া সিটি সেন্টারের সামনে আয়োজিত এক সভায় সাবেক ভূমিমন্ত্রীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত চাতরী ইউপি চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এম এ মান্নান চৌধুরী, সুগ্রীব মজুমদার দোলনদের ২৯ তারিখ নির্বাচনে জয়যুক্ত করে ঘরে ফিরব। এরমধ্যে যদি কোনও হুমকি-ধমকি আসে, কেউ আমাদের চলার পথে আসে, আমরা এদের মেরে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছে যাব। বৈরাগ ইউনিয়ন এবং চাতরী ইউনিয়ন ঐক্যবদ্ধ। বেশি বাড়াবাড়ি করলে দুই ইউনিয়নের মাঝখানে পিষ্ট করে মেরে ফেলব। আমাদের বিরুদ্ধে, আমাদের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনও কথা বলতে পারবে না।’

দলটির নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার পরও সাবেক ভূমিমন্ত্রীর প্রার্থী ঘোষণা তৃণমূলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘাত আরও বাড়তে পারে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘গতবার উপজেলা নির্বাচনে তৌহিদুল হক চৌধুরীকে একক প্রার্থী করেছিলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী। যার কারণে নির্বাচনে কোনও আমেজ ছিল না। এবার এম এ মান্নানকে নিজের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী। অন্যদিকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের বলয়ের সমর্থন পাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল। যার কারণে এবার নির্বাচনের মাঠ গরম থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসন কতটা নিরপেক্ষ ভূমিকা নেবে, সেই প্রশ্নও উঠছে দলের তৃণমূলে।’

এই বিষয়ে জানতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নান চৌধুরীর মুঠোফোন যোগাযোগ করে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা এই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। কোনও সংঘাত চাই না। কিন্তু একটি সিন্ডিকেট নির্বাচনকে ঘিরে সংঘাত চায়। তারা নাকি প্রতিপক্ষকে পিষ্ট করে বিজয় চিনিয়ে নেবে। এখন আর সন্ত্রাসী কায়দা অবলম্বন করে, ভোট চুরি করে জনপ্রতিনিধি হওয়ার কোনও সুযোগ নেই।’

আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কোনও সংঘাতে জড়াতে চাই না। জনগণ এমনিতেই ভোট দিয়ে আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবে।’

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবু জাফর ছালেহ বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে উপজেলাজুড়ে উৎসবের আবহ সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত এমন সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বাছাই ৫ মে, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ৬ থেকে ৮ মে মধ্যে, আপিল নিষ্পত্তি ৯ থেকে ১১ মে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১২ মে, প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৩ মে ও ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৯ মে।