শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়াকে হত্যা করে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন বাবা : নওফেল

প্রকাশিতঃ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ | ৯:৫৬ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম : নিজের ভেরিফাইড ফেইজবুক পেইজে প্রয়াত বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে স্মরণ করে অন্যরকম একটি পোস্ট দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

রোববার রাত ৮টার দিকে দেওয়া ওই পোস্টে তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে তাঁর বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরীর অস্ত্রধারী হওয়া এবং জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতিশোধ মেটানোর প্রতিজ্ঞার কথাও উল্লেখ করেন।

এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে বাবাকে নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করেন নওফেল। মৃত্যুবার্ষিকীতে যারা তার বাবাকে বিভিন্নভাবে স্মরণ করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

নওফেল লিখেন, তাঁর বাবা ধ্যানে-জ্ঞানে, পিতা মুজিবকে লালন করতেন, চর্চা করতেন। আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে সারা দেশ চষে বেড়িয়েছিন। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে অস্ত্রধারী হয়েছিলেন। খুনী জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। প্রতিকূল পরিবেশে দুর্গম টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কবর বাধিয়ে নিয়েছিলেন। শেষ বয়সে জীবন সায়াহ্নে নেতার স্মরণে টুঙ্গিপাড়ায় তীর্থতূল্য ভ্রমণ করেছিলেন প্রতি বছর। আজীবন সাধারণ মানুষের স্বার্থে দল এবং প্রশাসনকে পরিচালিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। কঠিন সময়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য বারবার জীবনঝুঁকি নিয়েছেন, নেত্রীর প্রতি আনুগত্যের প্রশ্নে কখনও পিছপা হন নাই।

শ্রমজীবী মানুষের জন্য, বঙ্গবন্ধু মুজিব যেই রাজনীতি করার নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিছেন সেটাই আমৃত্যু করে গেছেন। পরিবার হারিয়েছেন কিন্তু আপোস করেন নাই, পরিবার পরিজন, কোনো কিছুর কথা ভেবে পিছপা কখনও হন নাই। লিখেন নওফেল।

তিনি লিখেন, একজন “মহিউদ্দিন চৌধুরী” সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার একজন সহকর্মী হিসেবে, সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের নেতা হিসেবে সমাদৃত হয়েছেন সারা বাংলাদেশে। প্রিয় নেত্রীর নির্দেশে আন্দোলন সংগ্রামের সাথে সাথে পার্বত্য শান্তিচুক্তি, নগরপিতার দায়িত্ব, আবার লাশ ধোয়ানো, রোগীর দেখভাল, রাস্তা পরিস্কার- করেননি এমন কোনো কাজ বাকি ছিলো না।

আর্থিক সমৃদ্ধি কখনো তার হয়ে উঠেনি, এটি তিনি গৌরবময় মনে করতেন। রাজনৈতিক জীবনের যবনিকাপাত ঘটিয়েছেন লালদীঘিতে বক্তব্য রেখে। জন্ম হয়েছিলো তার বিজয়ের মাসে, বিদায়ও সেই মাসেই সেই লালদীঘির ময়দানে জানাযার নামাজের মাধ্যমে। একটি জীবন্ত ইতিহাস ছিলেন, এখন প্রয়াত হয়ে মুজিব সেনাদের অনুপ্রেরণা জাগাবেন।

“এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী”, নানান বিশেষণে ঢাকা এই নামটির মাঝে একজন অতি সাধারণ মানুষের সাদামাটা জীবন লুকিয়েছিলো, লক্ষ্য ছিলো তার আদর্শিক পিতার নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালনের চেষ্টা করা। কোনো চাওয়া পাওয়ার জীবন তার ছিলো না। পিতার হত্যার প্রতিশোধ নিতে শিয়ালদহ স্টেশনে সাধারণ শ্রমিকের জীবন থেকে, পতাকা উড়িয়ে জনপ্রতিনিধির জীবন সবই তিনি দেখেছিলেন। কিছু নিয়েই তার আক্ষেপ ছিলো না।

সন্তান হিসেবে একটি কথা বলতেন সবসময়, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার জন্য জীবনবাজি রাখতে হবে, তাকে ছাড়া এই বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়বে, মনে প্রানে এটি বিশ্বাস করতেন। তার নেত্রীও তাকে সেভাবেই দেখেছেন, মৃত্যুর পরে ছুটে এসেছিলেন। প্রতিনিয়ত তার চিকিৎসার খবর নিয়েছিলেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। জন্মিলে মরিতে হবে, এই চিরন্তন সত্যের কাছে তিনি আত্মসমর্পণ করেন আত্মবিশ্বাসের সাথে।

আমি আজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সকলের প্রতি, যারা চট্টলবীর “এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী’র” মৃত্যুবার্ষিকীতে তার বিদেহী আত্মার জন্য দোয়া করেছেন, প্রার্থনা করেছেন, তাকে স্মরণ করেছেন। সারা দেশে তার অসংখ্য সহকর্মী এখনো বেঁচে আছেন, তাদের সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। এদের সকলের আত্মত্যাগ, বিসর্জন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে একটি রাজনৈতিক দল থেকে পরিণত করেছে একটি অনুভূতিতে। বিজয়ের মাসে সেই অনুভূতি, যার নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে। এই দল, এই দেশ, এই মুজিব পাগল মানুষগুলোর প্রতি চিরঋণী হয়ে থাকবে। যোগ করেন নওফেল।

একুশে/জেইচ/এটি