রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস: ব্রডব্যান্ডের গতি কি আসলেই দ্বিগুণ হবে?

একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ২২ এপ্রিল ২০২৫ | ২:১৬ অপরাহ্ন


দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমিতি (আইএসপিএবি) বহুল ব্যবহৃত ৫০০ টাকার প্যাকেজে ইন্টারনেটের গতি ৫ এমবিপিএস থেকে বাড়িয়ে ১০ এমবিপিএস করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা এবং সেবাদাতাদের ব্যাখ্যায় প্রশ্ন উঠেছে, প্রতিশ্রুত এই গতি বাস্তবে পাওয়া যাবে কি না।

আইএসপিএবি গত শনিবার এই ঘোষণা দেয়। এর আগে ২০২১ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ‘এক দেশ এক রেট’ নীতিমালার আওতায় তিনটি প্যাকেজ নির্ধারণ করে দিয়েছিল। সেখানে ৫০০ টাকায় সর্বনিম্ন ৫ এমবিপিএস, ৮০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস এবং ১২০০ টাকায় ২০ এমবিপিএস গতি বেঁধে দেওয়া হয়।

প্রায় চার বছর পর এসে সেই সর্বনিম্ন প্যাকেজের গতি দ্বিগুণ করার কথা জানাল আইএসপিএবি। সমিতির সভাপতি ইমদাদুল হক বলেছেন, সরকারের দিক থেকে গতি বাড়ানোর একটি প্রত্যাশা ছিল এবং সব মিলিয়ে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন আইএসপি জানিয়েছে, কেউ কেউ ইতিমধ্যে নতুন গতি কার্যকর করেছে, অন্যরা শিগগিরই করবে।

তবে গ্রাহকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, প্যাকেজে উল্লেখিত গতি তারা পান না। রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদ জানান, তিনি ৫০০ টাকার ৫ এমবিপিএস প্যাকেজ ব্যবহার করলেও বাস্তবে গতি পান ২ থেকে ৩ এমবিপিএস।

এই অভিযোগের কারণ হিসেবে ইন্টারনেট সেবাদাতারা ‘শেয়ার্ড কানেকশন’ বা ভাগাভাগির নীতিকে উল্লেখ করছেন। একটি আইএসপি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আশিকুল বাশার বলেন, “ভাগাভাগির নীতি অনুযায়ী একটি সংযোগ কয়েকজন গ্রাহককে দেওয়া হয়। ফলে ১০ এমবিপিএসের ক্ষেত্রে একজন গ্রাহক হয়তো গড়ে ৩ এমবিপিএসের মতো গতি পাবেন।”

বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী, একটি সংযোগ সর্বোচ্চ আটজন ব্যবহারকারীর মধ্যে ভাগাভাগি করা যায়। আইএসপিগুলো বলছে, বেশিরভাগ গ্রাহকই এই শেয়ার্ড সংযোগ ব্যবহার করেন। একক বা ডেডিকেটেড সংযোগ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তার দাম বেশি।

আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হকও স্বীকার করেছেন, ভাগাভাগির নীতিতে ৫০০ টাকার প্যাকেজের গ্রাহকরা ১০ এমবিপিএসের চেয়ে কম গতিই পাবেন। সাধারণত রাতের বেলা বা পিক আওয়ারে ব্যবহারকারী বেশি থাকায় গতি কমে যায় এবং দিনের বেলায় বা অফপিক আওয়ারে গতি কিছুটা বেশি থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ‘শর্ত’ বা ভাগাভাগির বিষয়টি গ্রাহকদের কাছে পরিষ্কার করা হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন বলেন, “আইএসপিএবি যখন ১০ এমবিপিএসের ঘোষণা দেয়, তখন গ্রাহক ধরেই নেন তিনি এই গতিই পাবেন। কিন্তু প্যাকেজের শর্তগুলো জানানো হয় না। ইন্টারনেটের শর্তগুলো স্পষ্ট করে গ্রাহককে জানাতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, প্রতিশ্রুত গতি নিশ্চিত করা এবং গ্রাহক অভিযোগ নিষ্পত্তিতে বিটিআরসির জোরালো ভূমিকা ও পর্যবেক্ষণ দরকার। তার মতে, পুরনো ডিশ ব্যবসার মতো ইন্টারনেট ব্যবসাতেও পেশিশক্তি, চাঁদাবাজি এবং মানহীন সেবার মতো সমস্যা বিদ্যমান।

সম্প্রতি এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবও দেশের ইন্টারনেটের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইন্টারনেটের দাম কম বলা হলেও সেবার মান অত্যন্ত নিকৃষ্ট, যা বিবেচনায় দাম আসলে বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গতি পরীক্ষক সংস্থা ওকলার মার্চ মাসের হিসাবে, ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের গতিতে বিশ্বে ১৫৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০০তম।

বিটিআরসির হিসাবে, দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহক ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি। লাইসেন্সধারী আইএসপি ২ হাজার ৪১৫টি হলেও আইএসপিএবির মতে, লাইসেন্সসহ ও লাইসেন্সবিহীন মিলিয়ে মোট সেবাদাতা ৬ হাজারের বেশি। এদিকে বিটিআরসি জানিয়েছে, ‘এক দেশ এক রেট’ নীতি নিয়ে আবার কাজ করা হবে।