বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

জ্বালানি খরচ ১০ পয়সা, ই-বাইকের দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতারা

একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ১৬ অগাস্ট ২০২৫ | ৯:১১ পূর্বাহ্ন


জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবং পরিবেশ সচেতনতার কারণে বাংলাদেশে দ্রুত বাড়ছে ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল বা ই-বাইকের আমদানি ও জনপ্রিয়তা। খরচ সাশ্রয়ী হওয়ায় ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়লেও চার্জিং সুবিধার অভাব এবং নিবন্ধন সংক্রান্ত জটিলতা এই খাতের বিকাশে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, গত তিন বছরে দেশে ই-বাইকের আমদানি চারগুণ বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যেখানে ২,৪৪৬টি ই-বাইক আমদানি হয়েছিল, সেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা বেড়ে ১০ হাজার ৫৩টিতে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে আমদানি মূল্য ৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৪৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই জনপ্রিয়তার মূল কারণ এর সাশ্রয়ী চালনা খরচ। তেলচালিত মোটরসাইকেলে যেখানে প্রতি কিলোমিটারে খরচ দুই থেকে তিন টাকা, সেখানে ই-বাইকে খরচ মাত্র ১০ থেকে ৩০ পয়সা। ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান ব্যবসা কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, “তেলচালিত মোটরসাইকেলের বদলে ই-বাইক ব্যবহারে মাসে জ্বালানি খরচ প্রায় ৮০ শতাংশ সাশ্রয় করা সম্ভব। এমনকি একটি তেলচালিত মোটরসাইকেলের দুই বছরের বাড়তি রক্ষণাবেক্ষণ খরচ দিয়ে একটি ই-বাইক কেনা যায়।” ব্যবসায়ী অলি আহমেদ, যিনি দেড় বছর ধরে ই-বাইক ব্যবহার করছেন, জানান এতে তার মাসে পাঁচ হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।

ক্রমবর্ধমান এই বাজারের ৪০ শতাংশের বেশি চীনা ব্র্যান্ড রিভো ও ইয়াদিয়ার দখলে। ইয়াদিয়ার পরিবেশক হিসেবে কাজ করছে রানার অটোমোবাইলস। এছাড়া ওয়ালটন, আকিজ, আইমা, সালিদাসহ আরও কয়েকটি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান দেশে ই-বাইক সংযোজন ও বাজারজাত করছে। রানার অটোমোবাইলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল মুহাম্মদ বলেন, “জ্বালানি খরচ ও যানজটের কারণে একটি শ্রেণির মধ্যে ই-বাইকের চাহিদা বাড়ছে, তাই আমরাও সাশ্রয়ী দামে ভালো মানের ই-বাইক আনছি।”

তবে ই-বাইকের বাজার বড় হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে চার্জিং সুবিধার অভাবকে। বাসায় একটি ই-বাইক সম্পূর্ণ চার্জ দিতে সাত-আট ঘণ্টা লাগলেও চার্জিং স্টেশনে মাত্র ৪০ মিনিটেই তা সম্ভব। ওয়ালটনের কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান জানান, “সড়কে ই-বাইকের চার্জের সুযোগ সীমিত হওয়ায় অনেকে, বিশেষ করে দীর্ঘ ভ্রমণের ক্ষেত্রে, ই-বাইক কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না। ব্যাটারির দ্রুত চার্জিং ও সোয়াপিং কেন্দ্রের সুবিধা কার্যকর করা গেলে এই বাজার দ্রুত বড় হবে।”

সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেটে স্থানীয়ভাবে ই-বাইক উৎপাদনে করছাড়সহ নানা সুবিধা দিলেও সড়কে চার্জিং স্টেশন তৈরির বিষয়টি এখনো পিছিয়ে আছে। এদিকে, এই খাতের শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নিবন্ধন প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে, দেশে ৪৭ লাখের বেশি নিবন্ধিত মোটরসাইকেল থাকলেও নিবন্ধিত বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল ও স্কুটারের সংখ্যা মাত্র ২৬১টি। যদিও বাস্তবে কয়েক হাজার ই-বাইক রাস্তায় চলছে, যার অধিকাংশই নিবন্ধনহীন।