
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার আচরণ এবং রোগের লক্ষণ বদলে যাওয়ায় ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা আরও জটিল হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বর, শরীরে ব্যথা বা র্যাশের মতো পরিচিত লক্ষণ ছাড়াই অনেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন, যা ‘লক্ষণবিহীন ডেঙ্গু’ হিসেবে পরিচিত। এর ফলে রোগ নির্ণয়ে দেরি হচ্ছে এবং বাড়ছে মৃত্যুর ঝুঁকি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত ২২০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৫২ হাজার ১০৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে তিনজনের মৃত্যু এবং ৭০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গুর ‘ধরন-২’ এর প্রকোপ বেশি থাকলেও এ বছর রাজধানীতে ‘ধরন-৩’ এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হাসান সিদ্দিকী বলেন, “নতুন ধরন আসায় আগের তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি আর সুরক্ষা দিতে পারছে না। ফলে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে জটিলতা ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, “ডেঙ্গু আগের মতো সহজভাবে মোকাবিলার সুযোগ নেই। এখন রোগীদের মধ্যে জটিল উপসর্গ বেশি দেখা যাচ্ছে।”
কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “প্রলম্বিত বর্ষার কারণে আগামী কয়েক সপ্তাহ ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। এছাড়া, সম্প্রতি ছুটির সময় মশক নিধন কার্যক্রম শিথিল হয়ে পড়ায় পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।”
বরগুনা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ এবং ঢাকার বারিধারার মাদানী হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. ইব্রাহিম মাসুম বিল্লাহ উভয়েই জানিয়েছেন, তারা এমন অনেক রোগী পাচ্ছেন যাদের ডেঙ্গুর কোনো লক্ষণ না থাকলেও পরীক্ষায় পজিটিভ আসছে, অথবা পরীক্ষা নেগেটিভ হলেও প্লাটিলেট আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে।
চাঁদপুরের বাসিন্দা কামাল হোসেনের অভিজ্ঞতাও একই রকম। তিন সপ্তাহ জ্বরে ভোগার পর এবং একাধিকবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরও তার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়নি। শেষে শরীরে র্যাশ ওঠার পর হাসপাতালে গেলে ডেঙ্গু ধরা পড়ে।