
বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুসহ প্রায় তিন কোটি মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, যাদের ৯০ শতাংশই কোনো ধরনের চিকিৎসার আওতার বাইরে রয়েছেন।
আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস এমন এক সময়ে পালিত হচ্ছে, যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সংঘাতসহ নানা কারণে মানসিক রোগের ঝুঁকি বাড়লেও দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়ে গেছে খুবই অপ্রতুল। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য—‘বিপর্যয় কিংবা জরুরি অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা যেন পাওয়া যায়’।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ উপলক্ষে তার বার্তায় বলেছেন, “সংঘাত, স্থানচ্যুতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অসংখ্য মানুষ মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি অপরিহার্য।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক কলঙ্ক, কুসংস্কার এবং সচেতনতার অভাবে রোগীরা সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মুনাইম রেজা মুনিমের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর থেকে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পৌঁছাতে রোগীর গড় সময় লাগে ৩৮ মাস।
ডা. মো. মুনাইম রেজা মুনিম জানান, এর মধ্যে রোগীরা গড়ে পাঁচবার ফার্মাসিস্ট, সাধারণ চিকিৎসক, কবিরাজ বা ঝাড়ফুঁকদাতার শরণাপন্ন হন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. তৈয়বুর রহমান রয়েল বলেন, “প্রতিটি দুর্যোগে মানুষ শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়। এতে বিষণ্ণতা ও পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারের মতো রোগ তৈরি হয়, যা প্রায়ই উপেক্ষিত থাকে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মানসিক রোগীদের জন্য সরকারি পর্যায়ে শয্যা রয়েছে মাত্র ১ হাজার ২৪০টি, যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। দেশে মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীর সংখ্যাও এক হাজারের কম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাফিজা ফেরদৌসি জানান, দেশে মনোবিজ্ঞানীর সংকট রয়েছে এবং মানসিক সমস্যায় কখন সাইকিয়াট্রিস্ট (মনোরোগ বিশেষজ্ঞ) আর কখন সাইকোলজিস্টের (মনোবিজ্ঞানী) কাছে যেতে হবে, সে বিষয়েও সচেতনতার অভাব রয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি) সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংগঠন সচেতনতামূলক র্যালি ও সেমিনারের আয়োজন করেছে।