বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

দেশের ব্যাংক খাতে দিনে ৪০০’র বেশি সাইবার হামলা, এক চতুর্থাংশই চীন থেকে

নিরাপত্তায় বিনিয়োগ মাত্র ৫%, কর্মীদের সচেতনতা ‘খুবই নাজুক’, বলছে বিআইবিএম
একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ২৩ অক্টোবর ২০২৫ | ৭:৩৮ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে প্রতিদিন গড়ে চারশরও বেশি সাইবার হামলা হচ্ছে, যার বড় অংশই আসছে চীন, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া থেকে। এর মধ্যে শুধু চীন থেকেই হচ্ছে প্রায় এক-চতুর্থাংশ হামলা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক সাম্প্রতিক গবেষণায় এই উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। ‘সাইবার সিকিউরিটি ইন ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর অব বাংলাদেশ: সিকিউরিং দ্য ডিজিটাল ফিউচার’ শীর্ষক ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিপুল বিনিয়োগ করলেও সাইবার নিরাপত্তায় বরাদ্দ রাখছে মাত্র ৫ শতাংশ, যা ক্রমেই ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

বিআইবিএমের শিক্ষক অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান আলম উপস্থাপিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩-২৪ সালে দেশের ব্যাংক খাতে প্রতিদিন সর্বনিম্ন ১৪৫টি থেকে সর্বোচ্চ ৬৩০টি সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৪ শতাংশ চীন, ১৩ শতাংশ উত্তর কোরিয়া এবং ১২ শতাংশ রাশিয়া থেকে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান থেকে ৭ শতাংশ করে এবং রোমানিয়া ও তুরস্ক থেকে ৫ শতাংশ করে হামলা হয়েছে। দেশের ভেতর থেকেও ২ শতাংশ হামলা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকগুলো ডিজিটাল সেবায় মনোযোগী হলেও গ্রাহকের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথেষ্ট বিনিয়োগ করছে না।

ফিনটেক উদ্যোক্তা ড. শাহাদাত খান বলেন, “দেশের ব্যাংক খাত ডিজিটাল হচ্ছে কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুরক্ষিত হচ্ছে না। বড় ধরনের হামলা প্রতিরোধে আমাদের প্রস্তুতি খুবই দুর্বল। হ্যাকাররা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডাটাবেজ দখলে নিয়ে অর্থ দাবি করছে এবং কর্তাব্যক্তিরা তা পরিশোধও করছেন।” তিনি ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান-এমডিদের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে জ্ঞানের অভাব এবং বিনিয়োগে অনীহাকে দায়ী করেন।

বিআইবিএমের গবেষণা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোতে অন্তত ১৩ ধরনের সাইবার হামলা হচ্ছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটছে ‘অ্যাডভান্সড পারসিসট্যান্ট থ্রেট (এপিটি)’ বা গুপ্ত হামলা। এছাড়া ম্যালওয়্যার, র‍্যানসমওয়্যার এবং ফিশিংয়ের মতো হামলাও নিয়মিত ঘটছে।

এসব হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যাংকের কর্মীরাই, যা তাদের মনোবলকে প্রভাবিত করছে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সাইবার অপরাধের ২৭ শতাংশের সঙ্গেই আইটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের (ভেন্ডর) ব্যক্তিরা জড়িত। ব্যাংকের নিজস্ব কর্মীরাও ১৬ শতাংশ হামলায় যুক্ত।

গবেষণায় ব্যাংক কর্মী ও গ্রাহকদের সাইবার সচেতনতার ‘খুবই নাজুক’ চিত্র উঠে এসেছে। মাত্র ৪ শতাংশ ব্যাংক কর্মী এবং ৭ শতাংশ গ্রাহক এ বিষয়ে উৎকৃষ্ট মানের সচেতনতা রাখেন। ২৮ শতাংশ কর্মী এবং ৩১ শতাংশ গ্রাহকের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. আরিফ হোসেন খান বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে বেশ কয়েকটি নীতিমালা জারি করেছে এবং তদারকি করছে। তবে বিশ্বব্যাপীই সাইবার হামলার ধরন পাল্টাচ্ছে। এজন্য ব্যাংকের প্রযুক্তি খাতে আরও দক্ষ জনবল দরকার।”

বিআইবিএমের তথ্যমতে, ব্যাংক খাতে আইটি কর্মীর সংখ্যা বাড়লেও তাদের গড় দক্ষতার মান এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি।