
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জুলাই মাসে আমদানি বাণিজ্যে যে উল্লম্ফন দেখা গিয়েছিল, তা এক মাস না যেতেই হোঁচট খেয়েছে। আগস্ট মাসে পণ্য আমদানি আগের মাসের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ কমে গেছে, যা দেশের অর্থনীতিতে চলমান অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগে স্থবিরতার চিত্রই তুলে ধরছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ৫২২ কোটি ২৭ লাখ (৫.২৭ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা আগের মাস জুলাইয়ের (৬২৭ কোটি ডলার) চেয়ে ১০৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার কম। যদিও গত বছরের আগস্টের তুলনায় আমদানি কমেছে মাত্র ১ শতাংশ।
জুলাই মাসে আমদানি হঠাৎ করে তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছালে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর আশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আগস্টের এই পতনে সেই আশা ফিকে হয়ে গেছে। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা না কাটা পর্যন্ত আমদানি বাণিজ্য এবং নতুন বিনিয়োগে গতি ফেরার সম্ভাবনা কম।
বিনিয়োগে স্থবিরতার চিত্র
আমদানি কমে যাওয়ার পেছনে নতুন বিনিয়োগ না হওয়াকেই প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যও সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা সামান্য বাড়লেও নিষ্পত্তি (আমদানি সম্পন্ন হওয়া) কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামাল বা মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানিও (এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি উভয়ই) প্রায় ১০-১২ শতাংশ কমেছে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশে বিনিয়োগে একধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন করে কেউ বড় বিনিয়োগে যাচ্ছেন না।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “আমদানি বাড়ছে না, এটাই নেতিবাচক দিক। জুনে আমদানি একেবারে কমে গিয়েছিল, জুলাইয়ে বেশ খানিকটা বেড়েছিল, আগস্টে আবার কমে গেছে। এর প্রধান কারণ বিনিয়োগ কমে যাওয়া।” তিনি মনে করেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে ধরে নিয়ে বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত নিলেই আমদানি বাড়তে পারে।
অর্থনীতিতে শ্লথগতির শঙ্কা
যদিও অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের (জুলাই-আগস্ট) হিসাবে সামগ্রিক আমদানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯.২৬ শতাংশ বেড়েছে, মূলত জুলাই মাসের উল্লম্ফনের কারণে। কিন্তু আগস্টের চিত্র এবং শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির নিম্নগতি সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতির চাকাকে আরও মন্থর করে দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এরই মধ্যে গত ১৮ অক্টোবর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিপুল পরিমাণ আমদানি করা পণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল পুড়ে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানি খাত বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাব আগামী মাসগুলোতে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, “অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হলে আমদানি ও বিনিয়োগ দুটোই বাড়াতে হবে।”
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর না হলে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরে না এলে বিনিয়োগ ও আমদানি বাণিজ্যে গতি আনা কঠিন হবে।