বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

মাধ্যমিকের বই ছাপানো শুরুই হয়নি, জানুয়ারিতে পাওয়া নিয়ে ফের শঙ্কা

দরপত্র বাতিল, কনটেন্ট চূড়ান্ত না হওয়াকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা
একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ২৪ অক্টোবর ২০২৫ | ৮:২৭ পূর্বাহ্ন


নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে মাত্র দুই মাস বাকি থাকলেও মাধ্যমিক স্তরের কোটি কোটি বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ এখনও শুরুই হয়নি। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু বইয়ের বিষয়বস্তু (কনটেন্ট) চূড়ান্ত করা এবং ক্রয়-সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনও মেলেনি এখনও।

এ পরিস্থিতিতে আগামী ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং মুদ্রণ শিল্প সমিতির সংশ্লিষ্টরা।

গত বছর বই বিতরণে প্রায় তিন মাস দেরি হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল সরকার। সেই অভিজ্ঞতা থেকে এবার আগেভাগেই প্রক্রিয়া শুরু করলেও দরপত্র বাতিলসহ নানা জটিলতায় আবারও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

কেন এই বিলম্ব?

এনসিটিবির কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির প্রায় ১১ কোটি বইয়ের দরপত্র সম্প্রতি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ বাতিল করে দেওয়ায় পুরো প্রক্রিয়াটি থমকে গেছে। এছাড়া নবম-দশম শ্রেণির বইয়ের কার্যাদেশও সময়মতো অনুমোদন পায়নি।

তারা আরও জানান, বিভিন্ন শ্রেণির অনেক বিষয়ের বইয়ের কনটেন্ট এখনও চূড়ান্ত হয়নি, চলছে পরিবর্তন-পরিমার্জনের কাজ। ফলে এনসিটিবি কার্যত অন্ধকারে রয়েছে এবং কবে নাগাদ ছাপার কাজ শুরু হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “আগের বছরের অভিজ্ঞতায় এবার জুলাই-আগস্টেই বই ছাপার কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেখানে এখনো আমাদের সঙ্গে মাধ্যমিকের চুক্তিই স্বাক্ষর হয়নি।”

অন্তর্ঘাতের অভিযোগ

এদিকে, জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সদস্য আমান সুলাইমান এই বিলম্বের জন্য এনসিটিবির চেয়ারম্যানসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের দায়ী করেছেন। তার অভিযোগ, এরা “ফ্যাসিবাদের দোসর” এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ইচ্ছাকৃতভাবে কাজে বিলম্ব করছেন। তিনি পাঠ্যবই ছাপার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগও তোলেন।

তার এই অভিযোগের পর সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এনসিটিবিতে অভিযান চালায় এবং পাঠ্যবই মুদ্রণে অনিয়ম ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার কথা জানায়। দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার, মুদ্রণ ও বাঁধাইয়ে ত্রুটি এবং প্রেস মালিকদের সঙ্গে অসাধু যোগসাজশের প্রমাণ মিলেছে।

কর্তৃপক্ষের নীরবতা ও শঙ্কা

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্বে) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরীসহ অন্য কর্মকর্তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, বই ছাপার জটিলতা না কাটা পর্যন্ত তাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অনুমোদন ও চুক্তি প্রক্রিয়া শেষ করে ছাপার কাজ শুরু করতে আরও মাসখানেক সময় লেগে যেতে পারে। ফলে নভেম্বরের মধ্যে সব বই ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার যে লক্ষ্য ছিল, তা পূরণ হওয়া প্রায় অসম্ভব। জানুয়ারিতে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া নিয়েও তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন।

তবে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি জানিয়েছিলেন, বই ছাপানোর ক্ষেত্রে অনিয়ম ঠেকাতে দরপত্রগুলো আরও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

এনসিটিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ২১ কোটি ৪০ লাখ বই ছাপাতে হবে। যেখানে প্রাথমিক স্তরের প্রায় ৮ কোটি ৪৯ লাখ বই ছাপানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং উপজেলা পর্যায়ে পাঠানোও শুরু হয়েছে।