বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

জলবায়ু পরিবর্তনে নজিরবিহীন স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকটে বাংলাদেশ

‘আগামী ৩০ বছরে যা ঘটবে, ১০০০ বছরেও তা ঘটেনি’: আইনুন নিশাত
একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ৩০ অক্টোবর ২০২৫ | ১১:৩২ অপরাহ্ন


জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ এক নজিরবিহীন স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্য সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শ্রম উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ। একইসঙ্গে, ১৯৫০-এর দশকের তুলনায় ২০১৫-২০২৪ সময়ে ডেঙ্গু সংক্রমণের উপযোগী আবহাওয়া ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিকে আরও তীব্র করে তুলেছে।

‘দ্য ২০২৫ এডিশন অব দ্য ল্যানসেট কাউন্টডাউন অন হেলথ অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে প্রকাশ করা হয়। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ (সি৩ইআর) এবং দ্য ল্যানসেট কাউন্টডাউন গ্লোবাল টিম যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যাতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হেলথ প্রমোশন ইউনিট সহযোগিতা করে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবেশ অর্থনীতিবিদ ড. সৌর দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, “তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বায়ু দূষণ, রোগের প্রাদুর্ভাব ও কৃষিখাতের ক্ষতি—সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন এখন তাৎক্ষণিক জনস্বাস্থ্য সংকটে পরিণত হয়েছে।”

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, “গত এক হাজার বছরে যা ঘটেনি, আগামী ৩০ বছরে তা ঘটবে। উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা ও পানি নিরাপত্তাহীনতা এখন মানুষের দৈনন্দিন স্বাস্থ্যঝুঁকি।”

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালে সূক্ষ্ম বস্তুকণার (পিএম ২.৫) সংস্পর্শে এসে ২ লাখ ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, যা ২০১০ সালের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো সরাসরি ৯০ হাজার মৃত্যুর জন্য দায়ী।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মির্জা শওকত আলী অনুষ্ঠানে জানান, “আমরা সাভারকে নিয়ন্ত্রিত বায়ুমান অঞ্চল ঘোষণা করেছি। গৃহস্থালি বায়ুদূষণ রোধে বৈদ্যুতিক চুলা চালু করার উদ্যোগ নিচ্ছি এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিতের লক্ষ্য রয়েছে।”

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য আর ভবিষ্যতের হুমকি নয়—এটি বর্তমানের বাস্তব সংকট। এখনই সমন্বিত জাতীয় পদক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক সহায়তা না পেলে দেশের জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি ভয়াবহ চাপে পড়বে।