চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্ধিত গৃহকর নিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ যারা সমালোচনায় মেতেছেন তাতে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন থাকলে সেটার মধ্যে অন্যায়ের কিছু নেই বলে মনে করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) একাংশের কার্যকরী সভাপতি মাঈন উদ্দিন খান বাদল এমপি।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সকালে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসভবনে একুশে পত্রিকা’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে নগরীর গৃহকর ইস্যুতে তিনি বলেন, এই ইস্যুটা মহিউদ্দিন চৌধুরী না ধরলে অন্য চৌধুরীই তো ধরতে পারেন। কারণ গৃহকর বাড়ানোর প্রভাব প্রকারান্তরে সীমিত সামর্থ্যরে ভাড়াটিয়াদের উপরই পড়বে। তাই এ সমস্যা সমাধানের জন্য মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সুধীজন ও স্টেকহোল্ডারদের গোলটেবিল বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোরও পরামর্শ দেন এই নেতা।
চট্টগ্রাম-৮ (পাঁচলাইশ-বোয়ালখালী) আসনের সংসদ সদস্য মাঈন উদ্দিন খান বাদল বলেন, মেয়র নাছিরকে এগিয়ে এসে কর বাড়ানোর প্রক্রিয়াটি পরিস্কার করতে হবে। এ বিষয়ে তাকে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে। আমি যতটুকু জানি, কর বাড়ানোটা কিন্তু মেয়রের একক ইচ্ছায় না। এটা একটা প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়াটা অপরিস্কার থাকলে মানুষের মাঝে সন্দেহ ও ক্ষোভ তৈরি হবে। মানুষ বলবে মেয়র হঠাৎ করে কর বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই এই শহরে যারা সুধীজন, স্টেকহোল্ডার আছেন তাদের সবাইকে তিনি (মেয়র) গোলটেবিলে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। গোলটেবিলে সবার কাছ থেকে অন দ্যা স্পট একটা গ্রহণযোগ্য মতামত নিয়ে বিষয়টির সমাধান করতে হবে। এই যে আলোচনাচক্রটির আয়োজন করা- এটার দায়দায়িত্ব তো মেয়রের। হি শুড ডু ইট। তিনি যদি এটা না করেন এই করের সমস্যার দায়-দায়িত্ব প্রধানত তাকে নিতে হবে।’
এই ইস্যু নিয়ে যে যার মতো করে মনের মাধুরি মিশিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দেওয়া ঠিক নয় বলেও মনে করেন তিনি। সাক্ষাৎকারে জাতীয় নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা ও শোডাউন নিয়েও কথা বলেন মাঈন উদ্দিন খান বাদল।
বাদল বলেন, ২০১৭ আমরা পার করতে চলেছি। ২০১৮ এর শেষদিকে নির্বাচন হবে বলে লাভ নেই। নির্বাচন বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। এটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। ২০১৯ এর ৫ জানুয়ারির ৯০ দিন আগে নির্বাচন যদি না হয় সরকারের সমস্ত কিছু অবৈধ হয়ে যাবে।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এগুলো বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির নষ্ট চরিত্রের ফসল, যা রাজনীতিকে কখনো উচ্চমার্গে পৌঁছাবে না। যেহেতু বিষয়টির অনুপুঙ্খ আমার ধারণা নেই, তাই এর বেশি আমি মন্তব্য করতে চাই না। আমি শুধু এতটুকু বলবো, খালেদা জিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে যদি ত্রাণ দিতে চাইতেন, যেটা যদি তার প্রধান কাজ, প্রধান উদ্দেশ্য হতো তাহলে ‘শি শুড টেক এ হেলিকপ্টার, শি গো টেক এ ফ্লাইট এ কক্সবাজার’। কিন্তু বাস্তবে তিনি যে বিশাল বহর দেখালেন, এই বহরের পেছনে বিশাল অর্থের অবৈধ চর্চা থাকে সেটা জনগণ জানে। জনগণ এটাও জানে, যারা পথের ধারে একত্রিত হয়েছেন তারা যতটুকু না বিএনপি বা খালেদার প্রতি আবেগের কারণে, তার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছেন যেসমস্ত এলাকা তিনি অতিক্রম করেছেন সে সমস্ত এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রার্থীপদ নিশ্চয়তার মহড়া প্রদর্শনের জন্য। সেই মহড়াটিই এখানে প্রদর্শিত হয়েছে। পত্রপত্রিকা বলছে কোথায় কোন প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন, মহড়া দিয়েছেন।’
‘এত কাহিনী না করে খালেদা জিয়া সরাসরি বলতে পারতেন, আমি নির্বাচনী মহড়া করবো। শি হ্যাজ দ্যা রাইট টু গো। তার যাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু নির্বাচনী মহড়া না বলে আপনি যে সমস্যাটা তৈরি করেছেন, সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন, জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলেছেন। আপনি এটা বলে কয়ে করতে পারতেন। যেমন পাকিস্তান আমলেও বলতো যে, ট্রেনে করে যাত্রা করছি আমরা, ট্রেনযাত্রা। মাওলানা ভাসানী ফারাক্কাযাত্রা, বলে কয়ে করেছেন। এই যে সুন্দরবন রক্ষার জন্য যারা মিছিল করছেন তারা বলে কয়ে সুন্দরবন যাত্রা করেছেন। আপনি বলছেন রিলিফ দিতে যাচ্ছেন, কিন্তু বস্তুত আপনার মাথার মধ্যে ছিল একটি নির্বাচনী শোডাউন। এই মিথ্যাচারটা ঠিক না।’ বলেন জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ নেতা।
এ প্রসঙ্গে সরকারেরও সমালোচনা করেন প্রবীণ এ নেতা। তিনি বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে আগেই যদি আপনাদের ধারণা থাকে তাহলে আপনারা বলতে পারতেন, রাস্তা দিয়ে আমরা যেতে দিতে পারছি না। প্রতিদিনই তো আমরা দেখতে পাচ্ছি এখানে মিটিং করতে পারবেন না, এটা করতে পারবেন না। আপনি ইজিলি বলতে পারতেন আপনাকে আমরা রাস্তা দিয়ে যেতে দিতে পারছি না। ইউ হ্যাভ টু টেক এ ফ্লাইট টু কক্সবাজার। আপনাকে সরাসরি কক্সবাজার চলে যেতে হবে। তার কারণ- একটা সামগ্রিক রিলিফ ওয়ার্ক হচ্ছে, যাত্রাটি বাধার সৃষ্টি করবে বলে আমরা মনে করি।
এ নিয়ে দুই দলের সাধারণ সম্পাদকের সাম্প্রতিক ‘বচন’ নিয়েও কথা বলেন মাঈন উদ্দিন খান বাদল; বলেন, দুই দলের সেক্রেটারি যেভাবে কথা বলছেন, আমরা করি নাই, আপনারা করেছেন, আমরা মারি নাই, আপনারা মেরেছেন-এগুলো সব পুরনো পঁচাকথন। সারাজীবন এসব শুনে আসছি।
দুই সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি কেউ ধরে নেন যে, বাংলাদেশের মানুষ ওই জায়গায় আছে। নো, মানুষ ওই জায়গায় নেই। মানুষ এগুলো বিবেচনা করার ক্ষমতা অর্জন করেছে। এগুলো তাদের মধ্যে আধা পয়সারও প্রভাব তৈরি করে না। আপনারা মনে করছেন এই শোম্যানশিপ দিয়ে বৈতরণী পার হওয়া যাবে। একবারও বিবেচনা করছেন না ১৮ থেকে ৩৫-এই যে তরুণ সম্প্রদায়, ভোটারদের একটা বিশাল অংশ হচ্ছে অ্যাবসলিউটলি তরুণ। দে ডোন্ট কেয়ার ফর দিস। তারা সবাই আইটি ওরিয়েন্টেড পিপল। তাদের সবাই ফেসবুক ওরিয়েন্টেড পিপল। তারা সবাই ইনসটেন্টলি ঘটনা কী হয়েছে, কীভাবে হয়েছে বিবেচনা করে। আপনি চমক দেখিয়ে তাদেরকে পকেটে নিয়ে যাবেন, নো। এরা অনেক বেশি বিবেচনা করেন। অনেক রাজনীতিবিদ ভুল করছেন। অনেক বেশি গেরেন্টেড মনে করছেন। আসলে তারা গেরেন্টেড না।’
[চলবে]
# কালুরঘাট সেতু নিয়ে নিন্দুকদের জবাব দিলেন বাদল, বললেন এই আমলেই কাজের সূচনা
# রোহিঙ্গা সুরক্ষায় এমপি বাদলের প্রস্তাবটিই আন্তর্জাতিকভাবে এগোচ্ছে
# আমার রক্ত কি পানির দামে বিক্রি হবে-প্রশ্ন এমপি বাদলের