
সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দেওয়া ১৯ হাজার ৫০৬টি অস্ত্রের লাইসেন্সের মধ্যে ৬৫৭টি এখনও জমা পড়েনি বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদরপ্তরের সূত্র। এসব অস্ত্রের কোনো হদিস না মেলায় এবং এগুলোর একটি বড় অংশের মালিক সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা হওয়ায় দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এসব অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অস্ত্র জমা না দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সধারীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের শুরু হয়েছে। গত ২৯ জুন পর্যন্ত এ ধরনের ১৩২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক ব্যক্তিদের নামে ইস্যু করা সব অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে। একইসঙ্গে গোলাবারুদসহ এসব অস্ত্র ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৩ হাজার ৯০৪টি এবং এরপর আরও ২২১টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়ে। এছাড়া অভিযানে উদ্ধার হয় ২৬টি। তবে এখনও ৬৫৭টি অস্ত্রের কোনো হদিস মেলেনি।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, “নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেসব লাইসেন্সধারী তাদের আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেননি, সেগুলো সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী অবৈধ হয়ে গেছে। এসব অস্ত্র উদ্ধার এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আমরা এগুলোকে জননিরাপত্তার জন্য বড় ঝুঁকি মনে করি।”
অভিযোগ রয়েছে, বিগত সরকারের তিন মেয়াদে অনেক ক্ষেত্রে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিবেচনায় অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। এমনকি একাধিক মামলার আসামি, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীকেও লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এর সঙ্গে জননিরাপত্তার জন্য আরেকটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে গত বছরের আগস্টে থানা ও ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া অস্ত্রগুলোকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, অভ্যুত্থানের সময় ৫ হাজার ৭৫৩টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়, যার মধ্যে এখনও ১ হাজার ৩৬৯টি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, “লুট হওয়া অস্ত্র এবং জমা না দেওয়া লাইসেন্সকৃত অস্ত্র—এই দুই ধরনের অস্ত্রই এখন আইনশৃঙ্খলার জন্য বড় হুমকি। জননিরাপত্তার স্বার্থে অবিলম্বে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে এসব অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। অন্যথায় যেকোনো সময় এসব অস্ত্র দখল, চাঁদাবাজি বা খুনোখুনিতে ব্যবহৃত হতে পারে।”