
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে সম্ভাব্য সব প্রার্থীর ওপর গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সহিংসতামুক্ত একটি নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই আগাম কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবন থেকে শুরু করে আর্থিক লেনদেন পর্যন্ত ১১টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
‘অত্যন্ত জরুরি’ নির্দেশনায় ১১ তথ্য তলব
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেশের প্রতিটি থানাকে ‘অত্যন্ত জরুরি’ উল্লেখ করে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনায় মূলত ৭টি বিভাগে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রার্থীর পেশাগত বিস্তারিত পরিচয়, রাজনৈতিক ইতিহাস ও দলের অভ্যন্তরে তার ভূমিকা, নিজ এলাকায় সামাজিক ও ধর্মীয় প্রভাব এবং অতীতে কোনো উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার রেকর্ড।
এর পাশাপাশি প্রার্থীর নামে বিচারাধীন কোনো মামলা বা পূর্ববর্তী সাজার তথ্য, তার ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরন, আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা এবং বিদেশে যাতায়াত ও সম্পদের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রার্থীর অপরাধমূলক রেকর্ড, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং সহিংসতায় জড়ানোর ঝুঁকি আছে কিনা, তা-ও বিশ্লেষণ করতে বলা হয়েছে।
মূল লক্ষ্য সহিংসতা প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা কৌশল নির্ধারণ
এই ব্যাপক তথ্য সংগ্রহের মূল উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনের আগেই সম্ভাব্য সহিংসতা সৃষ্টিকারী বা ঝুঁকিপূর্ণ প্রার্থীদের চিহ্নিত করা এবং সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো। পুলিশ সদর দপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “নির্বাচনের আগে বা পরে কোনো রকম অস্থিরতা যেন না ঘটে, সে লক্ষ্যেই আমরা এই প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছি। এতে করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এবং সহিংস প্রবণ প্রার্থী বা তাদের কর্মীদের আগেভাগেই চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।”
প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি আসনের জন্য আলাদা নিরাপত্তা কৌশল নির্ধারণ করা হবে। গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করতে হবে, কোথায় মোবাইল টহল বাড়াতে হবে অথবা কোন নির্দিষ্ট আসনে র্যাবসহ বিশেষ বাহিনীর উপস্থিতি প্রয়োজন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মাঠ পর্যায়ে তৎপরতা শুরু
সদর দপ্তরের নির্দেশনা পাওয়ার পরই মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়ে গেছে। একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, “আমরা কয়েক দিন আগে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা প্রণয়নের নির্দেশনা পেয়েছি। এরপরই থানায় বিশেষ টিম গঠন করে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছি।”
এদিকে, গতকাল পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে এক অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, “যারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে লিপ্ত, তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকায় এ ধরনের তৎপরতা বেশি দেখা যাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতাও অপরিহার্য।