
সময় বয়ে চলে, দিন আসে-যায়, মানুষও হারিয়ে যায়। কিন্তু কিছু মানুষ শুধু স্মৃতিতে থাকেন না, তাঁরা থেকে যান আমাদের কাজে, আদর্শে এবং হৃদয়ের গভীরে এক অমলিন আলো হয়ে। প্রয়াত সম্পাদক আজাদ তালুকদার ছিলেন ঠিক তেমনই একজন মানুষ। আজ দুই বছর হলো তিনি নেই, কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতি আজও আমাদের প্রতিটি দিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এ বছর তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে ‘একুশে পত্রিকা’র সহকর্মীরা একত্রিত হয়েছিলেন। স্মরণসভা, জিয়ারত, প্রার্থনা—সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি। আমিও সবার সঙ্গে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, কথাও হয়েছিল সহকর্মীদের সঙ্গে। কিন্তু ভাগ্য হয়তো অন্য কিছু ভেবে রেখেছিল।
শুক্রবার সন্ধ্যায় হঠাৎ কাঁপুনি দিয়ে প্রচণ্ড জ্বর আসে। জ্বরের তীব্রতায় ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় বিছানা ছেড়ে ওঠার শক্তিটুকুও ছিল না। যখন মোবাইলটা হাতে নিলাম, দেখি সহকর্মীদের অসংখ্য মিসড কল। তাঁরা ততক্ষণে জিয়ারতের জন্য রওনা হয়ে গেছেন। বুকের ভেতরে তখন এক অব্যক্ত হাহাকার—একই সঙ্গে দায়বদ্ধতা ও অপারগতার মিশ্র অনুভূতি।
ভাইয়া, খুব চেয়েছিলাম আপনার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া করতে; নীরবে কিছুক্ষণ থেকে বলতে, ‘আপনি আমাকে কখনো ফিরিয়ে দেননি, আমিও আপনাকে স্মরণ করা থেকে নিজেকে ফেরাইনি।’ কিন্তু অসুস্থতার কাছে সেদিন মন হেরে গিয়েছিল। তবুও জানি, আপনি নিশ্চয়ই বুঝবেন। শরীরটা হয়তো বাঁধা ছিল, কিন্তু মন তো কখনো দূরে ছিল না।
আপনার শেখানো আদর্শ, সত্যের প্রতি অবিচল আনুগত্য এবং সাংবাদিকতা মানে যে কেবল তথ্য সরবরাহ নয়, বরং মানুষের পাশে দাঁড়ানো—এই বিশ্বাস নিয়েই আমি আজও কলম ধরি। আপনি একদিন বলেছিলেন, “তোমার কাজই তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেবে।” এই একটি বাক্যই আমার আত্মবিশ্বাসের সবচেয়ে বড় উৎস।
আজ আপনি নেই, কিন্তু আপনার ছায়ায় বেড়ে ওঠা আমরা, আপনার দেখানো পথে হাঁটা একেকজন কলমসৈনিক, এখনো আছি।
এই লেখাটি যখন লিখছি, শরীরে কিছুটা বল পেলেও জ্বর এখনো এক শর ওপরে। শরীর দুর্বল, চোখ ঝাপসা, তবু কলম থামাতে ইচ্ছে করছে না। হয়তো এই লেখাটাই আমার আরোগ্য, আমার প্রার্থনা। এর মাধ্যমেই যেন আপনার স্মৃতির সঙ্গে নতুন করে একাত্ম হচ্ছি। ভাইয়া, এই অসুস্থ শরীর নিয়েও আপনার প্রতি ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাই আমাকে লিখতে বাধ্য করেছে।
আপনাকে খুব মনে পড়ছে, ভাইয়া। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন। আমিন।
লেখক : রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি, একুশে পত্রিকা।