বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

ডিজিটাল নজরদারিতে ভোটের মাঠ, ব্যবহৃত হবে ৫০ হাজার বডিওর্ন ক্যামেরা

একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ৬ অগাস্ট ২০২৫ | ১২:৪৮ অপরাহ্ন


আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। এই প্রথমবার দেশের ভোটকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হচ্ছে ৫০ হাজার ‘বডিওর্ন ক্যামেরা’। পুলিশের পোশাকে থাকা এই ‘চলন্ত চোখ’ দিয়ে ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি মুহূর্ত সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হবে, যা নির্বাচনী ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে।

এই বিশাল কর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে আজ বুধবার বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক উচ্চপর্যায়ের সভা বসছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই বৈঠকে নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রান্ত একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ইউনিফর্মের সঙ্গে এই অত্যাধুনিক ক্যামেরাগুলো যুক্ত থাকবে। প্রতিটি ক্যামেরায় জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইস থাকায় কোন পুলিশ সদস্য কোথায় অবস্থান করছেন, তা সহজেই শনাক্ত করা যাবে। ভোটকেন্দ্রে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা বা বিতর্কের পরিস্থিতি তৈরি হলে ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ তাৎক্ষণিক প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। শুধু তাই নয়, পুলিশ সদর দপ্তরের কমান্ড সেন্টার থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরাসরি কেন্দ্রগুলোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তাৎক্ষণিক নির্দেশনা প্রদান করতে পারবেন।

এ বিষয়ে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, “ভোটকেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানা ব্যবস্থার পাশাপাশি আমরা বডিওর্ন ক্যামেরা ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছি। বর্তমানে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে এর সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। এটি শেষ হলেই আমরা সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় যাব।”

তিনি আরও যোগ করেন, “নির্বাচনে বডিওর্ন ক্যামেরার ব্যবহার আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। তবে নির্বাচনের পর এই ক্যামেরা অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ কাজেও লাগানো হবে।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রযুক্তি ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি যেকোনো বিতর্ক দ্রুত নিষ্পত্তিতে সহায়ক হবে।

পুলিশের পরিকল্পনা অনুযায়ী, নির্বাচনের পর ক্যামেরাগুলো যেকোনো গ্রেপ্তার, তল্লাশি, রাস্তায় যানবাহনের চেকিং এবং মামলা দায়েরের মতো日常 কার্যক্রমে ব্যবহৃত হবে। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যার মূল লক্ষ্য পুলিশের কার্যক্রমে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। গত ২৩ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজউদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় বডিওর্ন ক্যামেরার ব্যয় সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরির জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে, আজ বিকেলে অনুষ্ঠিতব্য গুরুত্বপূর্ণ সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশপ্রধান এবং বিজিবি, আনসার ও কোস্টগার্ডের মহাপরিচালকরাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবরা উপস্থিত থাকবেন। সভায় ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র চিহ্নিতকরণ, প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন এবং সার্বিক নিরাপত্তা কৌশল চূড়ান্ত করা হবে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।