বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

তিন প্রতিবেশীর সরকার পতন: আঞ্চলিক নীতি নিয়ে চিন্তায় ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিতঃ ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১২:৩৬ অপরাহ্ন


প্রতিবেশী তিন দেশ বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে গণআন্দোলনের মুখে সরকারের পতনের পর নিজেদের আঞ্চলিক নীতি নিয়ে ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সর্বশেষ নেপালে সহিংস বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘটনা ভারতের জন্য নতুন করে অস্বস্তির কারণ হয়েছে, কারণ এর আগে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনও দিল্লিকে অনেকটা অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলেছিল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারির পর নেপালে বিক্ষোভ শুরু হয়, যাতে পুলিশের গুলিতে ২০ জনের বেশি নিহত হন। এরপর প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবন ও নেতাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।

নেপালের এই ঘটনাপ্রবাহ দিল্লি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেপালের সহিংসতায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং মন্ত্রিসভায় বৈঠক করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, অলির দিল্লি সফরের মাত্র এক সপ্তাহ আগে তার সরকারের পতন ভারতকে অবাক করে দিয়েছে, যা ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের ক্ষমতাচ্যুতির ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়।

নেপালের সঙ্গে ভারতের প্রায় ১ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েছে এবং লাখ লাখ নেপালি ভারতে বসবাস ও কাজ করেন। এ ছাড়া নেপালের ৩২ হাজার গুর্খা সেনা ভারতের সেনাবাহিনীতে কর্মরত। ফলে নেপালের যেকোনো অস্থিরতা ভারতে সরাসরি প্রভাব ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত একটি কূটনৈতিক দোটানার মধ্যে পড়েছে, কারণ নেপালের বিক্ষোভকারীরা দেশটির তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিই ক্ষুব্ধ এবং ভারত এই সবকটি দলের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলে।

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগীতা থাপলিয়াল বলেন, “ভারত সতর্ক থাকবে, কারণ ভারত সরকার নেপালে আরেকটি বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি চায় না।”

ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দিল্লির সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তবে তাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে।

ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নেপালবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অশোক মেহতা মনে করেন, ভারত তার ‘মহাশক্তি’ হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় প্রতিবেশীদের ওপর থেকে মনোযোগ হারিয়েছে, যা একটি ভুল কৌশল। কারণ মহাশক্তি হতে হলে একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল প্রতিবেশী থাকা জরুরি।