বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু আজ

একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১১:১৬ পূর্বাহ্ন

দেবী দুর্গা এসেছেন মর্ত্যলোকে। গতকাল শনিবার শ্রীপঞ্চমীতে দেবীর বোধন (জাগ্রত) সম্পন্ন হওয়ার পর আজ রবিবার মহাষষ্ঠীতে তিনি আমন্ত্রিত ও পূজিত হবেন। গতকাল শনিবার সায়ংকালে বোধন হয়েছে মণ্ডপগুলোতে চিন্ময়ী আনন্দরূপিণীর। ক্ষণে ক্ষণে উলুধ্বনি, শঙ্খ, কাঁসর আর ঢাকের বাদ্যি জানান দিচ্ছে, ঠাকুরঘরে উদ্ভাসিত মৃন্ময়ী রূপ প্রতিমা বরণ চলছে।

শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব, শারদীয় দুর্গোৎসবের। ভক্তের ভক্তি, নিষ্ঠা আর পূজার আনুষ্ঠানিকতায় মাতৃরূপে দেবী দুর্গা অধিষ্ঠিত হবেন মণ্ডপে মণ্ডপে। আজ রবিবার মহাষষ্ঠী। এদিন রাত ৯টা ৫৭ মিনিট অবধি তিথি থাকবে। আগামীকাল মহাসপ্তমী।

বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এই পূজা ঐতিহ্যবাহী বারোয়ারি বা কমিউনিটি পূজা হিসেবে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে। সনাতন বিশ্বাসে ধূপের ধোঁয়ায় রবিবার সায়ংকালে ঢাক-ঢোলক-কাঁসর-মন্দিরার চারদিক কাঁপানো নিনাদ আর পুরোহিতদের জলদকণ্ঠে :‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ’ মন্ত্রোচ্চারণের ভেতর দূর কৈলাস ছেড়ে দেবী পিতৃগৃহে এসেছেন ঘোটক অর্থাৎ ঘোড়ায়। ‘সুদর্শন’ পঞ্জিকামতে, ঘোড়ায় আগমন বা গমনের ফল—ছত্রভংস্তুরঙ্গমে অর্থাৎ ছত্রভঙ্গ, ধ্বংস বা ছন্নছাড়া বা ধ্বংসাত্মক লীলার আশঙ্কা। অর্থাৎ ঘোটকে আগমনে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা প্রকাশ পাবে।

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

সনাতন ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় আবহমানকাল ধরে বিপুল উত্সাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে উত্সবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপন করে আসছে। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সমাজের সব স্তরের মানুষ একত্রিত হন, মিলিত হন আনন্দ-উৎসবে। উৎসবের এই উপলক্ষ পারস্পরিক সহমর্মিতাকে আরও বৃদ্ধি করে, সৃষ্টি হয় ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের বন্ধন। শারদীয় দুর্গোৎসব সত্য-সুন্দরের আলোকে ভাস্বর হয়ে উঠুক। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দের বন্ধন আরও সুসংহত হোক।’

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। হিন্দু ধর্মমতে জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা স্বর্গলোক থেকে মর্ত্যলোকে আসেন এবং ভক্তদের কল্যাণ সাধন করে শত্রুর বিনাশ ও সৃষ্টিকে লালন করেন। অশুভশক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের এই আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের তাৎপর্যকে অনন্য মাত্রা দিয়েছে।’

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিখিল কুমার নাথ জানান, এবার সর্বজনীন পূজামণ্ডপের সংখ্যা ২৯২টি। আমরা ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, সিএমপি কমিশনার, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে মিটিং করেছি। সেখানে সুন্দরভাবে দুর্গোৎসব ও প্রতিমা বিসর্জনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পূজা উদযাপনের সব প্রস্তুতি আমাদের সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, সুন্দরভাবে পূজা সম্পন্ন হবে।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তা বিবেচনায় এবার পূজামণ্ডপকে তিনভাগে ভাগ করে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ১ হাজার ৪৪০টি পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। বাকিগুলোতেও কঠোর নজরদারি রাখা হবে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তায় ১৭ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৩২০ ১০৮৩৯৮ নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়।

এবার চট্টগ্রামে নগর ও জেলায় মোট ১ হাজার ৯০৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলায় এবার সর্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপের সংখ্যা গত বছরের চেয়ে ১৯টি বেড়ে ১ হাজার ৬১৪টি হয়েছে। অন্যদিকে মহানগরে একটি কমে ২৯২টি সর্বজনীন পূজার আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পূজা উদযাপনের সার্বিক নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অধিকাংশ মণ্ডপে লাগানো হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরা।