
দেশের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখানো সরকারি কর্মসূচি ‘বাংলাদেশ হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইনিশিয়েটিভ (বিএইচসিআই)’ তহবিল সংকটের কারণে বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে। ঔষধ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন লাখ লাখ রোগী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গত সপ্তাহে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল রিপোর্ট অন হাইপারটেনশন ২০২৫’-এ এই কর্মসূচির প্রশংসা করে বলেছে, এটি উচ্চ রক্তচাপ ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী এবং অনুকরণীয় প্রভাব ফেলেছে।
কর্মসূচির আওতায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং জেলা হাসপাতালগুলোতে নিবন্ধিত উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের রোগীরা বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ পেতেন। ডব্লিউএইচও’র প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত চিকিৎসা নেওয়া ৫ লাখ ১৭ হাজার রোগীর মধ্যে ৫৬ শতাংশের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে।
কিন্তু ‘চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচির (এইচপিএনএসপি)’ মেয়াদ ২০২৪ সালের জুনে শেষ হয়ে যাওয়ায় ঔষধ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এই কর্মসূচির অধীনেই হাসপাতালগুলোর অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) কর্নারে ঔষধ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা হতো।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলছেন, এই সংকটের কারণে রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে এবং হঠাৎ ঔষধ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জীবনঘাতী জটিলতার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। অনেকে চিকিৎসা ছেড়ে দেওয়ায় কর্মসূচির সাফল্য ম্লান হয়ে যেতে পারে।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ডায়াবেটিস রোগী শাকিল মাহমুদ ঔষধ সংগ্রহের জন্য গতকাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, “আমি প্রতি মাসে একবার গিয়ে পুরো মাসের ঔষধ নিয়ে আসতাম। কিন্তু গতকাল আমাকে মাত্র ১৩ দিনের ঔষধ দেওয়া হয়েছে এবং পরের মাসে একই তারিখে আবার যেতে বলা হয়েছে।” এর ফলে বাকি দিনগুলোর ঔষধ শাকিলকে নিজের টাকা দিয়ে কিনতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, রক্তনালিতে চাপ ১৪০/৯০ এমএমএইচজি বা তার বেশি হলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলা হয়। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর এবং স্ট্রোক হতে পারে। ২০২১ সালে বাংলাদেশে মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল হৃদরোগ, যা মোট মৃত্যুর ৩৬ শতাংশ। ওই বছর ২ লাখ ৮৩ হাজার ৮০০ জন হৃদরোগে মারা যান বলে ডব্লিউএইচও’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে ৩০ থেকে ৭৯ বছর বয়সী ২ কোটি ২৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন, যাদের মধ্যে ১ কোটি ৯২ লাখের রক্তচাপ ছিল অনিয়ন্ত্রিত।
এমন পরিস্থিতিতে ‘ডোন্ট মিস এ বিট’ প্রতিপাদ্যে আজ বাংলাদেশে বিশ্ব হার্ট দিবস পালিত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৪১৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ৩০টি জেলা হাসপাতালে এনসিডি কর্নার চালু আছে। এসব কর্নারে নিবন্ধিত ১৮ লাখ রোগীর মধ্যে ৮-৯ লাখ উচ্চ রক্তচাপের এবং বাকিরা ডায়াবেটিসের রোগী।
চতুর্থ এইচপিএনএসপি’র মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন প্রকল্প অনুমোদিত না হওয়ায় সংকট তৈরি হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডকে (ইডিসিএল) ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ঔষধ সরবরাহ করা হবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে।
তবে বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সরকারি তহবিল বরাদ্দের পর ঔষধ সরবরাহ প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক সৈয়দ জাকির হোসেন, মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর বা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।