
দেশে সার ডিলার নিয়োগ ও বিতরণ ব্যবস্থা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) হাত থেকে সরিয়ে পুরোপুরি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এ লক্ষ্যে ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণসংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা ২০০৯’ সংশোধন করে একটি নতুন নীতিমালা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যা চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। একই সঙ্গে সারের ডিলার সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করার পরিকল্পনাও করা হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, সার বিতরণে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা আনা এবং রাজনৈতিক প্রভাব কমাতেই এই উদ্যোগ। তবে সারের ডিলারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ) এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এর ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় সংকট তৈরি হতে পারে।
নতুন নীতিমালায় যা থাকছে
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী সারা দেশে সারের ডিলার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৩ হাজারে উন্নীত করা হবে, যা বর্তমানে রয়েছে ৭ হাজার ১৫০টি। প্রতিটি ইউনিয়নে একজন ডিলারের পরিবর্তে তিনজন ডিলার নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একই ডিলার ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া উভয় প্রকার সার বিতরণ করতে পারবেন। অনিয়ম করলে ডিলারের লাইসেন্স বাতিলের বিধানও থাকছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) আহমেদ ফয়সল ইমাম জানান, সারের কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগে ইতোমধ্যে দুই হাজারের বেশি ডিলারের লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, “ডিলার নিয়োগে যেন স্বচ্ছতা থাকে সেজন্যই আমরা এ চেষ্টা করছি। এখানে রাজনৈতিক প্রভাবের সুযোগ সীমিত থাকবে। নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্যরাই সুযোগ পাবেন।” তিনি আরও জানান, সরকারি চাকরিজীবী বা সরাসরি রাজনীতিতে জড়িতরা ডিলার হতে পারবেন না এবং একই পরিবার থেকে একজনের বেশি ডিলার হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
বিএফএর সাবেক চেয়ারম্যান মো. ওয়ালিউর রহমান বলেন, “ডিলারের সংখ্যা বাড়ানো হলে সীমিত মুনাফা ভাগাভাগি হয়ে যাবে, এতে বর্তমান ডিলারদের টিকে থাকা কঠিন হবে। খুচরা বিক্রেতা না থাকায় কৃষকের সার সংগ্রহের প্রক্রিয়াও কঠিন হতে পারে।” তিনি নতুন ডিলার নিয়োগে অনিয়মের শঙ্কাও প্রকাশ করেন।
তবে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম সরকারের এই উদ্যোগকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “ডিলার বাড়লে কৃষকের জন্য সারের প্রাপ্যতা বাড়বে। বিসিআইসির কাজ উৎপাদন করা, আমদানি বা বিতরণ নয়। ডিলারশিপ মন্ত্রণালয়ের কাছে যাওয়ায় স্বচ্ছতা বাড়বে।”
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এএইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, “ডিলারের সংখ্যা বাড়লে প্রতিযোগিতা বাড়বে, মনোপলি থাকবে না। তবে ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করা একটি চ্যালেঞ্জ।”
চলতি আমন মৌসুমে সারের সংকট না থাকার সরকারি দাবি সত্ত্বেও বিভিন্ন জেলায় কৃষকদের বেশি দামে সার কিনতে হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এই সংকটকে ‘কৃত্রিম’ বলে অভিহিত করেছেন এবং এর পেছনে ডিলারদের কারসাজি ও স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছেন।