বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

নির্বাচনী জোট সম্প্রসারণে তৎপর বিএনপি, এনসিপিকে নিয়েও ‘ইতিবাচক’

আন্দোলনের সঙ্গীদের পাশাপাশি নতুন মিত্র খুঁজছে দল, নভেম্বরে দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান
একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ২৬ অক্টোবর ২০২৫ | ৮:২৭ পূর্বাহ্ন

বিএনপি লোগো
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আসনভিত্তিক প্রার্থী চূড়ান্ত করার পাশাপাশি একটি বৃহৎ নির্বাচনী জোট গঠনের প্রক্রিয়া জোরদার করেছে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনে সঙ্গে থাকা দলগুলোর বাইরেও নতুন মিত্রদের জোটে অন্তর্ভুক্ত করতে পর্দার আড়ালে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

বিশেষ করে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বিএনপির সম্ভাব্য জোট বা আসন সমঝোতা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বিএনপি এনসিপির বিষয়ে ‘ইতিবাচক’ মনোভাব পোষণ করছে এবং দলটির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ শনিবার বলেন, “নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির নেতৃত্বে একটি বৃহৎ জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এতে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের পাশাপাশি হাসিনা সরকারবিরোধী অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে।”

এনসিপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দলটির সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে। তবে জোটবদ্ধ হবো কিনা, সেটি রাজনীতির মাঠে নির্ধারিত হবে।”

নভেম্বরে ফিরতে পারেন তারেক রহমান

বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী নভেম্বর মাসে দেশে ফিরতে পারেন। তার দেশে ফেরার আগেই জোট গঠনের আলোচনা অনেকটাই এগিয়ে রাখতে চান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারেক রহমান দেশে ফিরে জোটের শরিক হতে আগ্রহী দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে জোটের ঘোষণা আসতে পারে।

জোটের সম্ভাব্য রূপরেখা

জানা গেছে, বিএনপি তাদের নেতৃত্বে একটি বিস্তৃত জোট গঠন করতে চায়, যেখানে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, এলডিপি, ১২-দলীয় জোট, বিজেপি, এনডিএম, ১১ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, চারদলীয় গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরাম, বিপিপি ও লেবার পার্টির মতো দলগুলো থাকতে পারে।

এছাড়া এনসিপি, গণঅধিকার পার্টি এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মতো ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চলছে। বিএনপি দেশের শীর্ষ আলেম ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সমর্থন আদায়েও তৎপর রয়েছে।

তবে ভিন্ন একটি সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা চলছে। এনসিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, এবি পার্টি ও গণঅধিকার পার্টি মিলে তৃতীয় একটি জোট গঠন করতে পারে, যারা পরবর্তীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে নির্বাচনী মিত্রতা বা আসন সমঝোতায় যেতে পারে।

এনসিপির দুজন কেন্দ্রীয় নেতা অবশ্য জানিয়েছেন, তারা এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

মিত্রদের বক্তব্য

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “জোট গঠনের আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে মাত্র। তবে আমরা বিএনপির সঙ্গে শুরু থেকেই আছি।”

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, তারা বিএনপির সঙ্গে বোঝাপড়া করতে আগ্রহী।

১২-দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রধান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ উভয়েই জানিয়েছেন, তারা আগামী নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গেই থাকবেন। গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরানও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আসনভিত্তিক ভোটের ব্যবধান কম হতে পারে, তাই এবারের নির্বাচনে জোটের সমীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, “বিএনপির নেতৃত্বে জোট হলে সেখানে মিত্র ছাড়াও আরও অনেক দল থাকবে। তবে শরিকদের আসন ছাড়ার ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা যাচাই করা উচিত।”