শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘খালেদাকে আজ নিয়ে যেতে পারব বলে মনে হয় না’

প্রকাশিতঃ ৭ এপ্রিল ২০১৮ | ১:০৯ অপরাহ্ন

একুশে ডেস্ক : দুই মাস পর কারাগারের বাইরে বিএনপি চেয়ারপারসন। শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষার পাশাপাশি চলবে চিকিৎসা। এ জন্য আজই তাকে কারাগারে নেয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা।

চিকিৎসক এবং কারা কর্তৃপক্ষের সূত্র বলছে, বিএনপি নেত্রীকে আপাতত এই হাসপাতালেই রাখা হতে পারে। তবে এই বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত করে কেউ বলছেন না, যদিও একাধিক চিকিৎসক ও পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যে বিষয়টির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

আরো : ৫১২ নম্বর কেবিনে খালেদা …

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক আবদুল্লাহ আল হারুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্তব্য করার মতো সময় আসেনি। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তথ্য দেবেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার শেখ নাজমুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে নিতে পারব কি না আমরা নিশ্চিত না।’

‘আমাদের দায়িত্ব ছিল ওনাকে এখানে নিরাপত্তার সঙ্গে নিয়ে আসা। ওনার চিকিৎসা কীভাবে হবে, সেটা আমাদের বিষয় না।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়ার পর সম্প্রতি তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি আলোচনায় এসেছে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দাবির পর।

গত ৩০ মার্চ খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানান মির্জা ফখরুল। একই দিন এতে মত দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দুই নেতার এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গণে গুঞ্জন ছড়ায় সরকারের সঙ্গে বিএনপির কোনো সমঝোতা হচ্ছে কি না।

আরো : খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে কোকোর স্ত্রী-মেয়ে

বেশ কিছুদিন ধরে শোনা যাচ্ছিল, সরকার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার কথা বলে বিদেশে পাঠাতে চায়। গত ১২ মার্চ কারাগারে দেখা করে মির্জা ফখরুল স্বয়ং খালেদা জিয়াকে এই প্রস্তাব দিয়ে এসেছেন বলে একটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। ওই পত্রিকার খবর অনুযায়ী, খালেদা জিয়া বিদেশে চলে যেতে রাজি হলে এবং তাকে ছাড়া বিএনপি ভোটে এলে তার জামিনে সরকার বাধা দেবে না।

যদিও পরদিন মির্জা ফখরুল এক অনুষ্ঠানে এমন প্রস্তাব দেয়ার কথা অস্বীকার করেন। তারপরও তার পক্ষ থেকেই বিএনপি নেত্রীকে বিদেশে নেয়ার দাবি উঠার পর সেই সংবাদ নিয়ে আবার আলোচনা তৈরি হয়েছে। নেতা-কর্মীরা জানতে চাইছেন বিএনপি সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতায় যেতে চাইছে কি না।

এর মধ্যে খালেদা জিয়াকে কারাগারে আনার পরপর তাকে এখানে কতদিন বা কতক্ষণ রাখা হবে, সেই বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর কেবিন ব্লকের ৫১২ নম্বর কক্ষে নেয়া হয় খালেদা জিয়াকে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার পর এই প্রথম কারাগারের চার দেয়ালের বাইরে আসলেন বিএনপি নেত্রী।

খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে আনা হতে পারে-এমন তথ্য পেয়ে সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের আশেপাশে নিরাপত্তার কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি নেত্রীকে নেয়া হয় হাসপাতালে। কেবিন ব্লকের আশেপাশে বিপুল সংখ্যক র‌্যাব-পুলিশ সেখানে আগে থেকে অবস্থান করছিল। পরে এই ব্লকের ৫১২ নম্বর কক্ষে নেয়া হয়।

গত ২৮ মার্চ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা হয়নি অনিবার্য কারণ দেখিয়ে। সেদিনই খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দাবি করেন, তাদের নেত্রী অসুস্থ।

আরো : খালেদা জিয়া কারাগার থেকে হাসপাতালে

পরদিন ঢাকার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন, ঢাকা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার শাহিন খান এবং কারাগারের চিকিৎসক মাহমুদুর রহমান বিএনপি নেত্রীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।

১ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুজ্জামাকে প্রধান করে নিউরোলজির মনসুর হাবীব, মেডিসিন বিভাগের টিটু মিয়া ও এবং ফজিকাল মেডিসিনের সোহেলী রহমানকে নিয়ে হয় মেডিকেল বোর্ড। এই বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ীই বিএনপি নেত্রীকে আনা হয় হাসপাতালে।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এখানে বিএনপি নেত্রীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সাত সদস্যের দল গঠন করা হয়েছে। তার রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি এক্সরে করা হবে। এমআরআইও করা হতে পারে।

খালেদা জিয়াকে কেবিন ব্লকে আনার পর তার দুই আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন সানাউল্লাহ মিয়া কেবিন ব্লকে যান। আর বিএনপির কর্মী সমর্থকরা বাইরে জড়ো হন। তবে তাদেরকে হাসপাতাল ঢুকতে দেয়া হয়নি। আর বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয় সেখানে।

একুশে/এএ