শেখ মোহাম্মদ জুলফিকার বিপুল : অন্তত একবার চিতমরম ঘুরতে যাওয়া যদি আমাদের শিক্ষার্থীদের কারিকুলামের অংশ হতো, তাহলে দারুণ একটা ব্যাপার হতো।
চিতমরম সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিস্কার আর সুন্দর গ্রামগুলোর একটি। আজ পর্যন্ত যত গ্রাম দেখেছি চিতমরম সেগুলোর ব্যতিক্রম। প্রতিটা রাস্তা পরিছন্ন, বাড়িগুলোকে ঘিরে নেই কোনো নিরাপত্তা দেয়াল, আছে কেবল কাঠের ফেন্সিং।
সবাই যার যার কাজ করছে। একটা মারমা মেয়ে সাইকেলের সামনে তার মাকে বসিয়ে কবিরাজের কাছে যাচ্ছে।
কোনো সাইকোপ্যাথ বা ফ্রাস্ট্রেইটেড ইভটিজারকে চোখে পড়লো না। এই জায়গা কি ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে ১০০ বছর এগিয়ে আছে, নিরাপত্তায় বা সভ্যতায়?
ওল্ড মন্সট্রি, শ্রমণদের কাঠের ডর্ম, শান্ত পায়ে মঙ্কদের হেঁটে যাওয়া দেখে মনে হতে পারে এটা কি কিছুটা থিম্পু? কিছুটা উলানবাটরের কান্ট্রিসাইড? নাকি সিকিম?
একই সাথে চিতমরম অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি, একটা মেল্টিং পট। বুড্ডিস্ট, মারমা, চাকমা, হিন্দু, মুসলিম সবাই যার যার হেরিটেজ নিয়ে থাকছে এখানে।
শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষ হলে আমরা বের হই। চিতমরম বাজারে গিয়ে দেখেছি কারো মধ্যে কোনো তাড়া নেই, অস্থিরতা নেই। ভিড়, হইচই নেই, দোকানগুলোতে গানের শব্দ নেই।
আজিজ কাপ্তাই লেকে গোসল করার প্রস্তুতি নিয়ে আসতে বলেছিল। লেক পার হলেই তার এই গ্রাম। আমাকে তো শুধু বলার বাকি। আমার ভ্রমণপিপাসু মনকে সে যেন উসকে দেয়।
যারা বেড়াতে যাবার জায়গা খুঁজে পায় না, তারা আসলে জানে না এক জীবনে কেবল বাংলাদেশ দেখেই সে শেষ করতে পারবে না, যদি সে দেখতে চায়, যদি সে টুরিস্ট না হয়ে ট্রাভেলার হয়।
শেখ মোহাম্মদ জুলফিকার বিপুল : লেখক, ভ্রমণপুজারি