
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি যানবাহন চলাচলের জন্য চরম বিপদজনক হয়ে উঠেছে। হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতেই, গত অক্টোবর মাসে এই মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার ৪৪ কিলোমিটার অংশে অন্তত ২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন যাত্রী ও পথচারীর প্রাণহানি ঘটেছে। সড়কের পাশঘেঁষে যত্রতত্র হাটবাজার, দুই পাশের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়া এবং শতাধিক আঁকাবাঁকা বিপদজনক বাঁককে এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে।
মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান বলেন, গত একমাসে মালুমঘাট হাইওয়ের আওতাধীন (চকরিয়া দক্ষিণাঞ্চল ফাসিয়াখালী থেকে খুটাখালী নতুনঅফিস পর্যন্ত) এলাকায় ১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬জনের মৃত্যু হয়েছে।
অপরদিকে, চিরিঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল আমিন বলেন, গত একমাসে চিরিঙ্গা হাইওয়ে থানার আওতাধীন (চকরিয়ার উত্তরাঞ্চল পৌরশহর থেকে উত্তর হারবাং আজিজনগর পর্যন্ত) এলাকায় মোট ১০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১জন যাত্রী মারা গেছেন।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটির জন্য স্থানভেদে ৬০ থেকে ১০৪ ফুট পর্যন্ত জায়গা অধিগ্রহণ করা থাকলেও দুই লেনের মূল সড়কটি মাত্র ২৪ ফুটের। সড়কের দু’পাশের অবশিষ্ট সব জায়গা বেদখল হয়ে গেছে।
সওজ জানিয়েছে, মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলা অংশে আজিজনগর থেকে ডুলাহাজারা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার সড়কে ৫৯৩টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

সড়ক বিভাগ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী জানান, ৩৫০ দখলদারকে ইতোমধ্যে সরে যেতে চিঠি দেওয়া হয়েছে, অন্যথায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে জায়গা পুনরুদ্ধার করা হবে। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ১৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কের শতাধিক বাঁক ‘মৃত্যুফাঁদ’ হয়ে আছে, যেখান থেকে অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনা ঘটছে।
মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণে গঠিত চকরিয়া উপজেলা কমিটির সভাপতি ও চকরিয়া আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর কবির বলেন, “চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া অংশে সড়ক দুর্ঘটনা যেন আমাদের নিত্যসঙ্গী। এমন পরিস্থিতিতে মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করা এখন জনগণের প্রাণের দাবি। আমরা সরকারের কাছে নিরাপদ সড়ক চাই, আমরা সড়কে মৃত্যুর মিছিল বাড়তে থাকুক এটা আর চাই না।”
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাশাপাশি সারাদেশ থেকে পর্যটন জেলা কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন যাতায়াত করে। কিন্তু মহাসড়কটি দুই লেন বিশিষ্ট হওয়ায় যেমন তীব্র যানজট হয়, তেমনি সংকোচিত সড়কে দুর্ঘটনাও বেড়ে চলছে।
এ অবস্থায় স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত সময়ে মহাসড়কটি ছয় লাইনে উন্নীত করা হোক এবং চালকরা যাতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি না চালায়, সেজন্য কঠোর ট্রাফিক পুলিশিং ব্যবস্থা জোরদার করা হোক।
একাধিক গাড়ি চালক দাবি করেছেন, মহাসড়কে প্রতিদিন লবণভর্তি ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান চলাচল করায় সেসব গাড়ি থেকে গলে পড়া পানিতে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে চালকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হন।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সবশেষ উদাহরণ হলো বুধবারের (৫ নভেম্বর) দুর্ঘটনা। এদিন সকালেই ফাঁসিয়াখালী সেনাক্যাম্পের অদূরে ঢালা এলাকায় বেপরোয়া গতির মারসা বাসের সঙ্গে নোহা মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে কুমিল্লার একই পরিবারের পাঁচ নারী পর্যটক নিহত হন।