বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২

১৩৯ জন এখনো কারাগারে, আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেল আরও ৬ জনকে

একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ৬ নভেম্বর ২০২৫ | ৫:১৩ অপরাহ্ন


কক্সবাজারের টেকনাফে মাছ ধরে ফেরার পথে জলসীমা অতিক্রম করায় একটি ট্রলারসহ ছয় রোহিঙ্গা জেলেকে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) ধরে নিয়ে গেছে। বুধবার সন্ধ্যায় শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকাম চ্যানেলে এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত অপহৃতদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। অপহৃত ছয়জনই টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ পৌরসভা কায়ুকখালীঘাট ট্রলারমালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমেদ বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় টেকনাফের বাসিন্দা আবদুল মতলবের মালিকানাধীন ট্রলারটি সাগর থেকে মাছ ধরে ঘাটে ফিরছিল। শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকাম চ্যানেলে (সাগর ও নদীর মোহনা) পৌঁছালে এর ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। ট্রলারটি পানিতে ভাসতে ভাসতে মিয়ানমারের নাফ নদীর জলসীমানা অতিক্রম করে নাইক্ষ্যংদিয়ার (রাখাইন রাজ্যের গ্রাম) দিকে যেতে থাকে।

সাজেদ আহমেদ জানান, এরপর আরাকান আর্মি ছয় জেলেসহ ট্রলারটি জিম্মি করে নাইক্ষ্যংদিয়া ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। ট্রলারসহ জেলেরা কোথায় আছেন তা জানা যায়নি।

সাজেদ আহমেদ আরও বলেন, “ছয় জেলে রোহিঙ্গা নাগরিক। পরিচয় গোপন করে তাঁরা মাছ ধরার কাজে নেমেছিলেন। তাঁরা হলেন, মো. ইয়াছিন, মো. আয়াছ, আতাউর রহমান, জিয়াউর রহমান, কেফায়েত উল্লাহ ও রশিদ উল্লাহ।”

এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে টেকনাফের জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন ট্রলারমালিকেরা। নিষেধাজ্ঞা শেষ করে অন্যান্য এলাকার জেলেরা বঙ্গোপসাগরে ইলিশ আহরণে নামলেও টেকনাফের জালিয়াপাড়া ও শাহপরীর দ্বীপের কয়েক শ ট্রলার ঘাটেই নোঙর করে রয়েছে।

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, “ট্রলারসহ ছয় রোহিঙ্গা জেলেকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে, এমন খবর তিনি শুনেছেন। রোহিঙ্গারা যেন আশ্রয়শিবির থেকে কাজের সন্ধানে বের হতে না পারেন, সে বিষয়ে নজরদারি রাখা হচ্ছে।”

উল্লেখ্য, এর আগে ২৭ অক্টোবর নাফ নদীর বদরমোকাম এলাকা থেকে বাংলাদেশি চার জেলে ও ২৮ অক্টোবর সাত জেলেসহ আরেকটি ট্রলার আরাকান আর্মি অপহরণ করেছিল।

ট্রলারমালিক ও বিজিবির দেওয়া তথ্য মতে, গত ১১ মাসে (গত বছর ডিসেম্বর থেকে) আরাকান আর্মি নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর থেকে ৩২৮ জন জেলেকে অপহরণ করেছে। বিজিবির প্রচেষ্টায় কয়েক দফায় ১৮৯ জন জেলেসহ ২৭টি ট্রলার ফেরত আনা সম্ভব হলেও আরও ১৮টি ট্রলার ও ১৩৯ জন জেলে রাখাইন রাজ্যের কারাগারে আটকা রয়েছেন।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, দীর্ঘ ১১ মাসের যুদ্ধের পর মিয়ানমারের সরকারি জান্তা বাহিনীকে হটিয়ে ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের মংডুটাউনশিপসহ ৮০ শতাংশ এলাকার (২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত) দখলে নেয়। এখনো সীমান্তে সংঘাত চলছে। অপহরণ ও গুলি আতঙ্কে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে।