শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএসআরএম’র কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় বায়েজিদ! (ভিডিও)

বিএসআরএম’র বিষাক্ত ধোঁয়ায় বিপন্ন জনজীবন : বাবু। অভিযোগ সত্য নয় : তপন সেন

প্রকাশিতঃ ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২ | ১১:১৭ পূর্বাহ্ন

মোহাম্মদ রফিক : চট্টগ্রাম নগরের নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার রড উৎপাদনকারী কারখানা বিএসআরএম-এর পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২ নং জালালাবাদ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাহেদ ইকবাল বাবু। গত ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি এ অভিযোগ দেন।

শুধু তা নয়, বিএসআরএম কারখানার চুল্লি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার একটি ভিডিও চিত্র নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে শনিবার আপলোড করেছেন কাউন্সিলর বাবু।

তিনি অভিযোগ করেন, জনবসতি এলাকায় গড়ে উঠা বিএসআরএম কারখানার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার কারণে বিপন্ন নাসিরাবাদ এলাকার জনজীবন। এই কারখানার কারণে ভুগছে পুরো বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার লাখ লাখ মানুষ।

তার অভিযোগ, পরিবেশ সংরক্ষণ আইনকে তোয়াক্কা না করে এই কারখানায় ‘বায়ু শোধনযন্ত্র” অকার্যকর রেখে রড উৎপাদন করছে। অথচ কারখানা ঘিরে ঘনবসতিপূর্ণ শেরশাহ, বাংলাবাজার, চন্দ্রনগরের লাখ লাখ মানুষের বসবাসের পাশাপাশি আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পোশাক কারখানা। দীর্ঘদিন থেকে এ কারখানা পরিবেশের ক্ষতি করে আসলেও মাঝেমধ্যে জরিমানা করে দায় সারছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মফিদুল আলম জানান, মানমাত্রাবহির্ভূত অপরিশোধিত বায়ুনির্গমনের মাধ্যমে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতিসাধন করার দায়ে নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার বেশ কিছু রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ইতিমধ্যে জরিমানা করা হয়েছে। বিএসআরএম’র বিরুদ্ধে কাউন্সিলর সাহেদ ইকবাল বাবুর দেওয়া অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, বিএসআরএম’র কারখানায় স্থাপিত এয়ার পলিউশান কন্ট্রোল প্ল্যান্ট (এপিসিপি) ত্রুটিপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানটিকে এপিসিপি আধুনিকায়নের জন্য বার বার নির্দেশনা দেয়া হলেও আমলে নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

কাউন্সিলর বাবুর অভিযোগ, বিএসআরএম কারখানায় “বায়ু শোধনযন্ত্র” থাকলেও তাদের চুল্লি থেকে প্রতিদিন কালো ধোয়া ছড়াচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করে প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশ-বিধ্বংসী কার্যক্রম চালাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।

জানা গেছে, সম্প্রতি নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার বিএসআরএমসহ আশপাশের আরও কিছু স্টিল মিলের চারপাশ থেকে বায়ুর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরীক্ষায় বায়ুতে ক্ষতিকর পদার্থ এসপিএম (সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট ম্যাটার) গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। সাধারণত এসপিএম প্রতি ঘনফুট মিটার ২০০ মাইক্রোগ্রাম। কিন্তু কারখানাগুলোয় নমুনা পরীক্ষায় সেটি পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ ৭৬২ মাইক্রোগ্রাম থেকে সর্বনিম্ন ৩৪১ মাইক্রোগ্রাম।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিএসআরএমসহ নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় যেসব রড উৎপাদন কারখানা সবচেয়ে বেশি পরিবেশ দূষণ করছে এসব প্রতিষ্ঠানের আশপাশ ঘিরে আছে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি’র স্থায়ী ক্যাম্পাস, সাইডার ইন্টান্যাশনাল স্কুল, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ভুক্তভোগী শেরশাহ কলোনির বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন, ‘বিএসআরএম’র কারখানার চুল্লী থেকে প্রতিদিন বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বের হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যা ও রাতের বেলায় কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় নাসিরাবাদের পুরো এলাকা। গাছপালা, বাড়িঘর ঢেকে যায় ধোঁয়ায়। মনে হয় যেন কুয়াশা পড়ছে। দিনে নেমে আসে রাতের অন্ধকার।’

খবর নিয়ে জানা গেছে, রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বাইরে নাসিরাবাদে কিছু অবৈধ কারখানা থেকেও দিনরাত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বের হয়। পরিবেশ দূষণরোধ করার কোনো ব্যবস্থা তারা রাখেনি। কারখানায় নেই কোনো বর্জ্য শোধনাগার বা এপিসিএস। এসব কারখানার কালো ধোঁয়ায় পুরো বায়েজিদ এলাকা ছেয়ে যায়।

অভিযোগ আছে, কারখানার মালিকরা ইটিপি ও এপিসিএস খরচ বাঁচাতে, ভোর রাতের দিকে কারখানা পরিশোধন করতে কালো ধোঁয়া ছেড়ে দেয়।

তবে কারখানা থেকে কালো ধোঁয়া বের হয় না বলে দাবি করেছেন বিএসআরএম এর উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেন গুপ্ত। রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি)  রাতে একুশে পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের কারখানা থেকে কালো ধোঁয়া বের হয় না। কাউন্সিলর সাহেদ ইকবাল বাবুর অভিযোগ সঠিক নয়। আমাদের কারখানার এপিসি শতভাগ কার্যকর। তিনি (কাউন্সিলর বাবু) কেন পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।”

আপনাদের কারখানা থেকে কালো ধোঁয়া ছড়ানোর একটি ভিডিও কাউন্সিলর বাবু তার ফেসবুকে আপলোড করেছেন জানালে এ বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি।