
বুধবারের (৫ নভেম্বর) সকালটা ফটিকছড়ির আজিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য আর দশটা দিনের মতো ছিল না। ক্লাসের সুনসান নিরবতার মাঝে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিল এক আগন্তুকের কথা। তিনি বলছিলেন তার নিজের ছেলেবেলার গল্প, এক টিনের চালার ঘর থেকে আজকের অবস্থানে পৌঁছানোর গল্প।
এই আগন্তুক আর কেউ নন, ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবেই তিনি আকস্মিক পরিদর্শনে এসেছিলেন বিদ্যালয়টিতে। কিন্তু প্রথাগত পরিদর্শন ছাপিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন শিশুদের অনুপ্রেরণার উৎস। শিক্ষক রক্তি বড়ুয়া জানান, “স্যার যখন শ্রেণিকক্ষে ঢোকেন, তখন বুঝতেই পারিনি তিনি ইউএনও। দীর্ঘক্ষণ অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। আদেশ-উপদেশ দিয়েছেন সরলভাবে। স্যারকে পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত।”
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ৩৫তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা কর্মজীবনের শুরুতে ছিলেন প্রকৌশলী। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। কিন্তু মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার এক অদম্য ইচ্ছা তাকে নিয়ে আসে প্রশাসন ক্যাডারে।
শিক্ষার্থীদের সামনে দাঁড়িয়ে মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী যেন ফিরে গিয়েছিলেন নিজের শৈশবে। তিনি বলেন, “বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার বাসিন্দা আমি। একটি টিনের চালার ঘরেই আট-দশ জন শিক্ষার্থীর মতো বড় হয়েছি। স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়ালেখা চুকে পরে চুয়েট থেকে ডিগ্রী অর্জন করি। কর্মজীবনের শুরুতে হয়েছিলাম প্রকৌশলী কিন্তু পরে অনেক সাধনার পর বিসিএস ক্যাডার হয়েছি। মানুষের দোরগোড়ায় গিয়ে সেবা করার সুযোগ পেয়েছি; তাই তোমাদের সেবা করছি।”

ইউএনও মোজাম্মেল হক চৌধুরী শিশুদের বলেন, “সত্যি বলতে, তোমাদের মতো আমারও একটি স্বপ্ন আছে; একদিন এ দেশটি হবে শিশুদের। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে। তোমরা আমাদের সন্তানতুল্য। তোমাদের অভিভাবক ও শিক্ষক তোমাদের পথপ্রদর্শক। তাদের কথার চরম মূল্য দেবে।”
ইউএনওর এই ব্যক্তিগত গল্প আর আন্তরিক কথায় আপ্লুত শিক্ষার্থীরা। মো. আবদুল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থী বলে, “ইউএনও স্যারকে আমাদের কাছে পেয়ে খুব ভালো লেগেছে। উনার বক্তব্যগুলো চিরদিন মনে রাখবো এবং অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। উনার সাথে আমাদের যে স্মৃতি রয়েছে তা সারাজীবন মনে থাকবে।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিদা নাছরীন এই পরিদর্শনকে ভিন্নভাবে দেখছেন। তিনি বলেন, “উপজেলায় একজন শিক্ষাবান্ধব ইউএনও পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। তিনি যেমন ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের খবর নিয়েছেন; তেমনি শিক্ষকদের খবরও নিয়েছেন। এতে আমরা অনেক খুশি।”
মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী কেবল গল্প শুনিয়েই দায়িত্ব শেষ করেননি। তিনি বিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা ও আঙিনা ঘুরে দেখেন এবং সন্তোষ প্রকাশ করেন। একইসাথে, বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।