রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

কেডিএস ডিপোর পার্কিং সুবিধা না থাকায় মহাসড়কে যানজট, অসহায় পুলিশ

প্রকাশিতঃ ৫ এপ্রিল ২০২২ | ৪:১৩ অপরাহ্ন


এম কে মনির : নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা নেই বেসরকারি কনটেইনার ডিপো কেডিএস লজিস্টিকস কর্তৃপক্ষের। ফলে সেই ডিপোতে আসা-যাওয়া করা শতশত গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই। ফলে সীতাকুণ্ডের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইট ও পাক্কা মসজিদ এলাকায় প্রতিদিনই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার সকালেও সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইট ও পাক্কা মসজিদ এলাকায় কেডিএস লজিস্টিকসের ডিপোর গাড়িগুলো রাখা হয়েছে। এতে মহাসড়ক সরু হওয়ায় দীর্ঘ ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট দেখা দেয়। যানবাহনের দীর্ঘ সারিতে আটকা পড়ে অ্যাম্বুলেন্সও। ফলে বিপাকে পড়েন শহরগামী রোগী, চাকুরীজীবি, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার হাজার হাজার মানুষ। রমজানের দিনে উত্তপ্ত রোদের মধ্যে গাড়িতে আটকা পড়ে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সড়কের উভয় পাশে কেডিএস লজিস্টিকস ডিপোর শতশত গাড়ির অবৈধ পার্কিং করার ফলে এখানে প্রতিদিনই যানজট লেগে থাকে। তবুও যানজট নিরসনে দৃশ্যমান ভূমিকা নেই হাইওয়ে পুলিশের। তবে পুলিশের দাবি, তারা অসহায়। আইনের তোয়াক্কা করছে না কেডিএস লজিস্টিকস।

আজ সকাল ১১টার দিকে যানজটে আটকা পড়া চাকরীজীবি সোহেল একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিদিন শহরে যাতায়াত করতে হয় আমার মতো অনেককে। কিন্তু সীতাকুণ্ড থেকে কেডিএস লজিস্টিকস ডিপোর সামনে এলেই আটকা পড়তে হয় তীব্র যানজটে। রোজার দিনেও এ যানজটের নিরসন হয়নি। রোজা রেখে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছি। তার উপর অফিসে টাইম মেইনটেইনের চাপ।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেডিএস লজিস্টিকস ডিপোর গাড়ির কারণে সৃষ্ট যানজট ঘন্টার পর ঘন্টা স্থায়ী হয়। মহাসড়কে কেডিএস লজিস্টিকসের মালবাহী গাড়িগুলোর অবৈধ পার্কিংই এ যানজটের অন্যতম কারণ।’

অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন জানিয়ে গণপরিবহনের যাত্রী মো. নাহিদ বলেন, ‘কেডিএস লজিস্টিকস ডিপোর সামনে প্রতিদিন যানজট লেগে থাকে। রোজার দিনেও ব্যতিক্রম হয়নি। একদিকে তীব্র গরম, আরেকদিকে তীব্র যানজট। কষ্টের শেষ নেই। আমরা এ যানজট থেকে মুক্তি চাই।’

যানজটে আটকা পড়া যাত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার মাকে শেভরণে সকাল ১০ টায় ডাক্তার দেখানোর কথা রয়েছে। তিনি জটিল শারীরিক রোগে ভুগছেন। সকাল ৯টায় গাড়িতে ওঠলেও সকাল এগারোটায়ও কেডিএস লজিস্টিকস ডিপোর সামনে যানজটে আটকে আছি। শহরে যেতে ১ ঘন্টার জায়গায় ২ থেকে ৩ ঘন্টা লাগছে। রোজার দিনেও সে ভোগান্তি থেকে রেহাই মিলছে না।’

এদিকে নাম প্রকাশ না করে কেডিএস লজিস্টিকস ডিপোর একাধিক গাড়ি চালক বলেছেন, কেডিএস লজিস্টিকস ডিপোর পার্কিং ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। যা আছে খুব ছোট। সড়কেই দাঁড়িয়ে থাকতে বলা হয় তাদের। এতে পুলিশি ঝামেলায় পড়তে হয়। যানজট থেকে তারাও রেহাই চান।

স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘কেডিএস মনে করে সড়কটি তাদের কেনা সম্পত্তি। নিজস্ব পার্কিং গ্রাউন্ড না রেখেই মহাসড়কে গাড়ি রেখে আসছে তারা। প্রতিবাদ করলে তারা জবাব দেয় সরকারি সড়কে গাড়ি রেখেছে। আমাদের জায়গায় তো আর রাখেনি। এভাবে জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়ে পরিচালিত হচ্ছে কেডিএস লজিস্টিকসের ব্যবসা। এতে আমাদের ব্যবসায় পরিচালনায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রমজানে সে দুর্ভোগ আরও চরমে পৌঁছেছে। যানজট নিরসনে পুলিশের ভূমিকা চোখে পড়ে না।’

এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য সচিব গিয়াস উদ্দিন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘রমজান মাসে যানজটের ভোগান্তি থেকে জনগণকে রেহাই দিতে হবে। কেডিএস লজিস্টিকস ডিপো তাদের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা না রাখায় এ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কে দাঁড়ানো গাড়িগুলোকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হলে তারা এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে বাধ্য হবে। এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।’

অভিযোগেরে বিষয়ে জানতে কেডিএস লজিস্টিকস ডিপোর জেনারেল ম্যানেজার জোবায়দা শারমিনকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে কেডিএস লজিস্টিকস ডিপোর জুনিয়র অপারেটর মুকুল দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘যানজটের জন্য আমরা একা দায়ী নই।’

এ বিষয়ে বারআউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি কাজী নাজমুল হক একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা যানজট নিরসনে সবসময় আন্তরিক। এখনো যানজট নিরসনে সড়কে রয়েছি। কেডিএস লজিস্টিকস ডিপো তাদের পার্কিং ব্যবস্থা করবে বললেও করেনি। সমসময় তীব্র যানজট লেগে থাকে বলে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আমরা তাদের অবৈধ পার্কিং বন্ধে অনেকটা অসহায়। বারবার অসংখ্য গাড়িকে শাস্তির আওতায় আনা, কেডিএস লজিস্টিকসকে নোটিশ করা হলেও তারা আইনের তোয়াক্কা করছে না।’