শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

কুবি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামবে শিক্ষক সমিতি

| প্রকাশিতঃ ২ এপ্রিল ২০২৪ | ৯:৩৫ পূর্বাহ্ন


কুমিল্লা : ঢাকায় এসে গত ৩১ মার্চ তারিখে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈন বলেছেন, কুবির সর্বক্ষেত্রে জামাতের অনুসারী রয়েছে। তার এ ধরনের মন্তব্যের বিষয়টি একটি বেসরকারি গণমাধ্যমে উঠে আসলে এর প্রতিবাদ জানিয়ে ৭ দিনের মধ্যে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের আল্টিমেটাম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতি। তথ্য-প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হলে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করবে শিক্ষক সমিতি।

সোমবার (১ এপ্রিল) কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মাহমুদুল হাসানের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে একজন উপাচার্য হিসেবে গঠনমূলক সমালোচনায় অংশগ্রহণ না করে তিনি ঢালাওভাবে শিক্ষকদের ওপর মিথ্যা কালিমা লেপনের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছেন এবং শিক্ষকদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করার মাধ্যমে শিক্ষকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়েছেন। এটা মোটেও উপাচার্য-সুলভ আচরণের মধ্যে পড়ে না। শিক্ষক সমিতি মনে করে এটি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সৃষ্ট বিভিন্ন অরাজকতা ধামাচাপা দেওয়ার একটি অপপ্রয়াস। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সকল শিক্ষকের প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ মনে করে উপাচার্য প্রত্যেক শিক্ষকের নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ ও বিশ্বাসকে আঘাত করেছেন।

এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে উপাচার্যের সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, অব্যবস্থাপনা, নিয়োগ/পদোন্নতিতে বিধি বহির্ভূত অবৈধ শর্ত আরোপ, ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষকদেরকে পদোন্নতি বঞ্চিত করা, স্থায়ীকরণ রোধ করা, আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ডিন ও বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ, টেন্ডার বাণিজ্য, ভর্তি পরীক্ষার অর্থ আত্মসাৎ, গবেষণা প্রকল্পের তহবিল তসরুফ, তথ্য গোপন করে অবৈধ ইনক্রিমেন্ট গ্রহণ, নিয়োগে আত্মীয়করণ, যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে নির্ধারিত যোগ্যতার চেয়ে কম যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ, নানাবিধ আর্থিক দুর্নীতি ও অশিক্ষকসুলভ আগ্রাসী আচরণের বিরুদ্ধে শিক্ষকরা তাদের যৌক্তিক দাবিসমূহ আদায়ে সামষ্টিক প্রতিবাদ করে, যা এখনও চলমান। শিক্ষকদের আন্দোলনের চাপে কোণঠাসা হয়ে এখন তিনি মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে ২০০৬ সালে এবং শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর উদ্দেশ্যে ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথমবারের মতো ১৫ জন শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। তৎকালীন ১৫ জন শিক্ষকের মধ্যে বর্তমান ০৮ জন শিক্ষকের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষকই মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক। ২০০৭ পরবর্তী সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও সমমনা রাজনৈতিক দলসমূহ জোটের অংশগ্রহণে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬৬ জন শিক্ষকের সিংহভাগ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন ও চর্চার মাধ্যমে শিক্ষা-গবেষণার উন্নয়ন এবং দেশ গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ শিক্ষকগণই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে সমিতির সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গুটিকয়েক শিক্ষক প্রকাশ্যে ভিন্ন ধারার আদর্শের চর্চা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তবুদ্ধি চর্চার জায়গা এবং সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের প্রতিটি ব্যক্তি নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ চর্চার অধিকার রাখেন।

কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে উপাচার্য যে বিরূপ মন্তব্য করেছেন, এটি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যাচার এবং তার মনগড়া বক্তব্য। এই বক্তব্যের সমর্থনে আগামী সাত দিনের মধ্যে অকাট্য তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের আহ্বান জানাচ্ছি, প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যর্থ হলে শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে এক দফা আন্দোলনের কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।